
দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম সমাবর্তন
শিক্ষাজীবন শেষে গায়ে কালো গাউন, মাথায় টুপি আর অর্জিত ডিগ্রির সনদ হাতে পাওয়ার স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর। আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫ম সমাবর্তন। এই সমাবর্তন নিয়ে অন্যরকম উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মাঝে।
দীর্ঘদিন ধরেই নানা জটিলতায় হয়নি সমাবর্তন। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই আয়োজন সৃষ্টি করেছে ভিন্ন এক উপলক্ষ। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। তাই এ আয়োজন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিয়েছে নানান পরিকল্পনা।
সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে অংশ নিতে আবেদন করেছেন ২২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। দেশের ইতিহাসে এরচেয়ে বড় সমাবর্তনের নজির নেই, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ ৯ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে যাচ্ছে সমাবর্তন। সবশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সমাবর্তন, যা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ সমাবর্তন।
প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে মাত্র ৫ম সমাবর্তন ॥ দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রাখলেও যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের সমাবর্তন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সবশেষ অনুষ্ঠিত ৪র্থ সমাবর্তনও হয়েছিল প্রায় ৮ বছর পর। যেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আব্দুল হামিদ।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ওই সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ১৯৪ গ্র্যাজুয়েট। এ ছাড়া ২৫ জন পিএইচডি ও ১৩ জন গবেষককে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়।
উপাচার্যের স্বাক্ষর করা সনদ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা ॥ সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের হাতে স্বাক্ষর করা সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, মোট ১৬ হাজার ৬১৫ জনের বিভিন্ন ডিগ্রির সনদে নিজ হাতেই স্বাক্ষর করছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আসছেন অধ্যাপক ইউনূস ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিতির পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি গ্রহণ করবেন।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন চবি উপাচার্য ॥ রীতি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য। তবে এ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে আসছেন না রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দীন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সমাবর্তনের সভাপতিত্ব করবেন।
জুলাই আন্দোলন মাথায় রেখে সমাবর্তনের লোগো ॥ জুলাই আন্দোলনকে মাথায় রেখে সমাবর্তনের লোগো করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবির ৫ম সমাবর্তনের লোগোর দুইপাশে সবুজঘেরা দিয়ে বোঝানো হয়েছে চবিকে ঘিরে রাখা সবুজ প্রকৃতি। লোগোর নিচে শহীদ আবু সাঈদের সেই প্রতিকৃতি, যা দুই হাত সম্প্রসারিত। আর লাল রং দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য। উন্মোচিত এ লোগোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, গৌরবময় ইতিহাস ও শিক্ষার আলোকে আগামীর পথচলার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সমাবর্তনের এ লোগো আগামী দিনের সকল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম, স্মারক ও প্রচারণায় ব্যবহৃত হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উন্মোচিত হচ্ছে নিয়মিত সমাবর্তনের দ্বার ॥ দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে সমাবর্তন আয়োজনের ফলে বৃহৎ আকারে সমাবর্তন করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। এর আগে চবিতে হয়েছে মাত্র ৪টি সমাবর্তন। সর্বপ্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। দ্বিতীয় সমাবর্তনটি হয় ১৯৯৯ সালে। ৩য় সমাবর্তনটি হয় ২০০৮ সালের নভেম্বরে। আর সবশেষ হয় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। আগামী ১৪ মে হবে ৫ম সমাবর্তন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা এবারের মধ্য দিয়ে নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে সমাবর্তন আয়োজনের দ্বার উন্মোচিত হবে।
জানতে চাইলে সমাবর্তন উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তন ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরনের উচ্ছ্বাস ও আবেগ দেখা যাচ্ছে। সবাই আনন্দ নিয়ে কাজ করছেন। আমরা অধীর অপেক্ষায় আছি সমাবর্তন নিয়ে। সম্ভবত এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হতে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমরাই সর্বপ্রথম অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করতে যাচ্ছি বাংলাদেশে। অনেক আগেই এটা উনি ডিজার্ভ করলেও আমরা তাঁকে দিতে পারিনি নানা বাস্তবতায়, এটি আমাদের জন্য ব্যর্থতা। আমরা আশা করছি, এই সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবর্তনের যে জট সেটি নিরসনের পথও উন্মোচন হবে। আগামীতে নিয়মিত সমাবর্তন করতে পারব।