
ছবি : সংগৃহীত
পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি দেশ কাতার, যার আয়তন মাত্র ১১,৫৮১ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের তুলনায় ১৩ গুণ ছোট এই দেশটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার সময় কাতার ছিল একটি দরিদ্র মরুভূমির দেশ, যেখানে মানুষের প্রধান পেশা ছিল মাছ ধরা ও মুক্তা সংগ্রহ। কিন্তু আজ এই দেশটির রূপান্তর সত্যিই অবাক করার মতো।
কাতারের এই অভূতপূর্ব উন্নতির পেছনে মূল কারণ হলো এর বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশটির মরুভূমির নিচে লুকিয়ে আছে বিশাল তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার, বিশেষ করে নর্থ ফিল্ড গ্যাসক্ষেত্র যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। এই সম্পদ কাতারকে এনে দিয়েছে অকল্পনীয় সম্পদ, যার ফলস্বরূপ দেশটির মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ৬৭,০০০ মার্কিন ডলার। তবে কাতার শুধু প্রাকৃতিক সম্পদের উপরই নির্ভর করে নেই, বরং তারা এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য বড় বড় বিনিয়োগ করছে।
দোহা শহর কাতারের এই উন্নতির জীবন্ত প্রমাণ। শহরটিতে আজ গগনচুম্বি অট্টালিকা, আধুনিক শপিং মল এবং বিশ্বমানের অবকাঠামো দেখে মনে হয় যেন কোনো সাই-ফাই মুভির দৃশ্য। আল জাজিরার মতো বিশ্বখ্যাত মিডিয়া নেটওয়ার্কের জন্মস্থান এই কাতার। এছাড়াও দেশটি শিক্ষা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে, যার প্রমাণ দোহার এডুকেশন সিটি যেখানে বিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা রয়েছে।
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে কাতার বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের সামর্থ্য। এই আয়োজনের জন্য তারা তৈরি করেছে অভূতপূর্ব স্টেডিয়াম এবং পর্যটন সুবিধা। শুধু তাই নয়, কাতার বিশ্বজুড়ে বড় বড় বিনিয়োগ করছে। লন্ডনের একটি বড় অংশ এখন কাতারের মালিকানায়, আমেরিকার অনেক বড় কোম্পানিতেও আছে তাদের বিনিয়োগ।
বাংলাদেশের সাথেও কাতারের গভীর সম্পর্ক। প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কাতারে কাজ করে এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হচ্ছে, বিশেষ করে জ্বালানি সহযোগিতা এবং জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে।
‘আর্থনা সামিট-২০২৫’ -এ অংশগ্রহণ করতে কাতার যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস চার দিনের এই সফরে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে ব্যবসা ও জ্বালানি সহযোগিতার পাশাপাশি ভিসা উন্মুক্ত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির মত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সমৃদ্ধির পেছনে কাতারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা কাজ করছে। তারা শুধু বর্তমানেই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও পরিকল্পনা করছে। জাতীয় ভিশন ২০৩০ এর মাধ্যমে কাতার একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মরুভূমির মধ্যে গড়ে ওঠা এই দেশটি আসলে প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকল্পনা এবং সম্পদের সুষম ব্যবহার একটি জাতিকে কতদূর এগিয়ে নিতে পারে। কাতারের গল্প শুধু একটি দেশের গল্প নয়, এটি একটি অনুপ্রেরণা যে কিভাবে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং কঠোর পরিশ্রম একটি জাতিকে বিশ্বমঞ্চে অনন্য স্থান দিতে পারে।
আঁখি