
বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লবণের মাঠ
গত পাঁচদিন ধরে কক্সবাজার অঞ্চলে কখনো হালকা কখনো ভারি বৃষ্টির কারণে জেলায় প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করছে বিসিক কক্সবাজার অফিস। আর এতে প্রায় তিনদিনে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছে প্রান্তিক চাষিরা। ফলে প্রান্তিক লবণ চাষিদের মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। একদিকে লবণের দাম কম, অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে যারা লবণ মাঠ বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করেছে তারা বেশিরভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে জানান লবণ চাষিরা। যার কারণে প্রণোদনার আশায় রয়েছে অনেক চাষি।
কক্সবাজারের ইসলামপুরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, লবণ মাঠে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে চাষিরা দোকানে বসে অলস সময় পার করছে। তা ছাড়া লবণ উৎপাদনে সূর্যের তাপ তেমনটা না থাকার কারণে আগামী এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান লবণ চাষিরা।
লবণের দাম নিয়ে এমনিতেই হতাশ কক্সবাজার জেলার লবণ চাষিরা। তার ওপর বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে মাঠের লবণ। এতে লবণ চাষিদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়ল। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন কেন্দ্রিক এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ। এই দুই অঞ্চলের প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করেন চাষিরা।
গত বছরের ২ নভেম্বর মৌসুমের প্রথম দফায় মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন। এ বছর একমাস আগে অক্টোবর থেকে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। এবার ৩৭ হাজার চাষি লবণ চাষে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মাঠে উৎপাদন কাজে জড়িত আছেন আরও ৭৫ হাজার শ্রমিক।
পরিবহন, লোড-আনলোড এবং মিল পর্যায়ে প্যাকেটিং ও বাজারজাত মিলিয়ে লবণ শিল্পে পাঁচ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এ বছর প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষে ছিল। এরমধ্যে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও হ্রাস পেতে পারে লক্ষ্যমাত্রা।
লবণ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কিন্তু এ পরিমাণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকারও বেশি। এতে কেজিপ্রতি তিন টাকা, মণপ্রতি ১২০ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে চাষিদের।
চাষিদের অভিযোগ, লবণ মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর ফলে এই শিল্পের লাভ পুরোটাই যাচ্ছে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হচ্ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত গত ৫ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।
তবে শনিবার ভোর থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার একমাত্র টেকনাফে লবণ উৎপাদন চালু থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন চাষিরা। এর আগের দুইদিনের বৃষ্টিতে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর ও বাঁশখালীতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।