
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ গ্যাস বন্ধ
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ায় গাজীপুরের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। ভোলায় উৎপাদিত গ্যাস কন্টেনারের মাধ্যমে ঢাকায় আনার কাজে বাধা দেওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গাজীপুরের শিল্প-কারখানার মালিকরা বিপাকে পড়েন। শুক্রবার রাত থেকে ভোলার গ্যাস ভোলায় চাই, ‘ঘরে ঘরে গ্যাস চাই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইন্ট্রাকো কোম্পানির এলপিজি গ্যাস ভর্তি বেশ কয়েকটি কাভার্ডভ্যান ঢাকায় যাওয়ার পথে আটকে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এতেই বিপর্যয় দেখা দেয় শিল্প-কারখানায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার ঢাকায় জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইন্ট্রাকোর প্রতিনিধি দল। এ সময় তিনি তাদের আশ্বস্ত করেনÑ তিনি কাতার যাচ্ছেন সোমবার রাতে। সেখান থেকে ফেরার পর ভোলার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এ বিষয়টির ফয়সালা করার চেষ্টা করবেন।
এ বিষয়ে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির চেয়ারম্যান এইচএম হাকিম আলী জনকণ্ঠকে বলেনÑ ইন্ট্রাকো তো শুধু গ্যান ভোলা থেকে ঢাকায় আনার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। সরকারের সঙ্গে এটাই চুক্তি। কিন্তু এখন যদি ভোলা থেকে গ্যাস ঢাকায় আনতে না দেওয়া হয় তা হলে তো দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। ভোলার মানুষের সঙ্গে তো ইন্ট্রাকোর কোনো বিরোধ নেই। তবে হঠাৎ এভাবে গ্যাস আনতে বাধা দেওয়ায় মূলত শিল্প-কারখানারই ক্ষতি হচ্ছে। এতে দেশের মূল অর্থনীতিরই ক্ষতিসাধন হবে। এ জন্যই অবিলম্বে এটার ফয়সালা হওয়া উচিত।
এদিকে সোমবার গাজীপুর পরিদর্শনে দেখা গেছেÑ ভোলা থেকে আনা ওই গ্যাস দিয়েই বেশ গার্মেন্টসসহ কিছু শিল্প-কারখানায় জ্বালানি ঘাটতি পূরণ করা হতো। বিগত মে মাস থেকেই এসব কারখানায় ভোলা থেকে আনা গ্যাস দিয়েই উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা হতো।কিন্তু শুক্রবার রাত থেকেই হঠাৎ গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে ভুক্তভোগী শিল্প মালিকরা সরকারের অবিলম্বে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ভোলা থেকে সিএনজি আকারে ঢাকার কল-কারখানায় দেওয়ার গ্যাস পরিবহনের দািিয়ত্বে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং কোম্পানির প্রাায় বিশটি আটক রেখেছে আন্দোলকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা মশাল মিছিল করে তাদের দাবির পক্ষে স্লোগান দেয়। এ ছাড়া তারা সড়কে অবস্থা নিলে সাময়িক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেওয়া বন্ধ করে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক কল-কারখানা স্থাপন, ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ ে দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে ছাত্র- জনতার ব্যানারে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
তারা ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালের সামনে কাভার্ডভ্যানটি আটকে দেয়। বিক্ষোভকারীরা জানান, ভোলার গ্যাস ভোলার ঘরে ঘরে না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইন্ট্রাকো কোম্পানির মাধ্যমে বোতলজাত করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ নিয়ে ব-দ্বীপ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠছে। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে ইন্ট্রাকোর একটি গ্যাসবাহী গাড়ি ভোলা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় কাভার্ডভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন।
পরে তারা কাভার্ডভ্যানটি বাস টার্মিনাল সংলগ্ন হেলিপ্যাড রোডে নিয়ে রাখেন। এর আগে, ঘরে ঘরে গ্যাস, গ্যাসভিত্তিক শিল্প- কারখানা, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, ইন্ট্রাকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে ভোলার ইউএনও আন্দোলনকারীদের তাদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে দাবির বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের আশ্বাস দেন। ইন্ট্রাকো কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন জানান, ছাত্র-জনতার দাবির প্রেক্ষিতে সিলিন্ডার পরিবহন করা গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, হঠাৎ এভাবে ভোলা থেকে গ্যাস ঢাকায় আনায় বাধা দেওয়ার নেপথ্যে কাদের স্বার্থ রয়েছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে শুধু ভোলার স্বার্থ রয়েছে নাকি অন্য কোনো রাজনীতি রয়েছে সেটাও তদন্তের দাবি রাখে।