
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে হোগলা পাতার নানা সামগ্রী
হোগলা পাতার রশি দিয়ে তৈরি বাহারি ফুলদানি, ম্যাট, শোপিস ও ঝুরিসহ শত রকমের হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকায়। আর দেশের জন্য ঘরে বসেই এমন সুনাম বয়ে এনেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নারীরা। বাড়ির আঙিনায় বসে হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছেন বাহারি সব দৃষ্টিনন্দন নিত্যপণ্য সামগ্রী।
হোগলা পাতার রশি দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব ম্যাট, ঝুরি, ফুলদানি, শোপিস, টিস্যু বক্স ও ট্রেসহ নানান ধরনের হস্তশিল্প পণ্যকে আরও আকর্ষণণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে রঙিন সুতা ও পাট। পণ্য তৈরির সঙ্গে যুক্ত ফুলবাড়িয়ার হাজার হাজার নারীর পরিবারে ফিরেছে আর্থিক সচ্ছলতা। দারিদ্র্য বিমোচনে এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা ইউনিয়নের কৈয়ারচালা গ্রামের গৃহবধূ মাজেদা খাতুন কৃষিজীবী স্বামীর আয়ে কোনোভাবেই চালিয়ে নিতে পারছিলেন না
সংসার। বছরজুড়ে অভাব আর অনটন লেগেই থাকত। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আর উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা হোগলা পাতার রশি দিয়ে ঘরে বসেই এখন তৈরি করছেন বিভিন্ন পণ্য। প্রতিমাসের রোজগারে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে তার পরিবারে। মাজেদার আয় ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বাকতা গ্রামসহ আশপাশের অনেকে। ফলে, অনেক গৃহবধূ এখন ঝুঁকছেন হোগলা পাতার পণ্য তৈরির কাজে।
রপ্তারিকারক প্রতিষ্ঠান আর স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কর্মীরা ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন হোগলা পাতার তৈরি কাঁচামালের রশি আর ফ্রেম। বাকতা, কৈয়ারচালা, কুলুরচালা, কুশমাইল, বরুকা ও ভালুকজানসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারো নারীর কর্মসংস্থান মিলিছে এই কাজে। প্রত্যেকের পরিবারে যোগ হয়েছে বাড়তি আয়। ঘরে বসে রোজগারের এমন কাজে যুক্ত হতে পেরে খুশি এলাকার উদ্যমী নারীরা।
পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকে নিয়মিত সঞ্চয়ও করছেন। ঋণ জর্জরিত অনেকে দেনা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধে যারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারাও ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা অর্জন করে কিছুটা হলেও ভারমুক্ত হয়েছেন।
নোয়াখালী, ভোলা ও বরিশাল জেলা থেকে সংগ্রহ করা হোগলা পাতা সরবরাহ করছে রপ্তানিকারক ও স্থানীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। পরে নিজস্ব কর্মীদের মাধ্যমে হোগলা পাতার তৈরি রশি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি বাড়ি। পণ্য তৈরির পর তা সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। পরে তা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হোসেন জানান, হোগলা পাতায় পণ্য তৈরির কাজে প্রতিদিনই বাড়ছে আগ্রহী নারীর সংখ্যা। এতে ফুলবাড়িয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার নারীর। বিনা পুঁজিতে বাড়িতে বসে এসব পণ্য তৈরি সহজ বলে অনেকে ঝুঁকছেন এই বাড়তি আয়ের কাজে। নারীদের পাশাপাশি এখন বেকার যুবকরাও যোগ দিচ্ছেন এই কাজে। তাদের অনেকে অবশ্য মজুরি বাড়ানোর দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ঘরে বসে কর্মসংস্থানের এমন সুযোগ পেয়েছেন ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙতে এমন উদ্যোগ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সক্ষমতার যোগান দেবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঋণ জর্জরিত গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে এমন উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।