ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

যে যৌন হয়রানির শিকার সেও মজা নিছে, পরীক্ষায় মার্কও নিছে: বেরোবি প্রক্টর

বেরোবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২১:০৪, ২১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:০৪, ২১ এপ্রিল ২০২৫

যে যৌন হয়রানির শিকার সেও মজা নিছে, পরীক্ষায় মার্কও নিছে: বেরোবি প্রক্টর

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, মানসিকভাবে টর্চার ইত্যাদির প্রতিবাদে শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে এক গণজমায়েতের ডাক দেয়। সেখানে কুশপুত্তলিকা বানিয়ে সেখানে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়।

গণজমায়েত শেষে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখন তিনি বলেন, "যাকে বা যে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে সেও মজা নিছে, পরীক্ষায় মার্কসও নিছে।"

আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণচূড়া সড়কে এক দল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রতীকী জুতার মালা পরিয়ে কুশপুত্তলিকা দাঁড় করিয়ে রাখাসহ জুতা নিক্ষেপ করা হয়। 

এসময় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রহমান আলী বলেন, যৌন নিপীড়নের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নিপীড়নের আলাদা সেল থাকা উচিত। আমরা কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানি অনেকগুলো বিষয় দেখেছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের সকলের দাবি একটাই এ সকল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে যেন এমন শাস্তি দেওয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করতে না পারে।

এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা আক্তার বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় দেখভালের জন্য প্রক্টর মহোদয় নিয়োজিত থাকেন। আমাদের প্রক্টর স্যারের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে অপমানজনক। উনি নিজেই বলেছেন এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। সেহেতু কোনো তদন্তও হয়নি। তদন্ত ছাড়াই বা অভিযোগের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ না করেই উনি বলতে পারেন না যে অভিযোগদাতা শিক্ষার্থী 'মজা নিয়েছেন'। যদি ওনার কাছে মনে হয়ে থাকে যৌন হয়রানির দাবি তোলা নারী শিক্ষার্থী মজা নিয়েছে বা সুবিধা হিসেবে ভালো রেজাল্ট হাতিয়ে নিয়েছে তাহলে ওনার উচিত সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষকের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে "মজা দেওয়া-নেওয়ার" কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা। যদি এরকম কিছু হয়েও থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় উভয়পক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা। একজন প্রক্টরের এ ধরনের মানসিকতা এবং শব্দচয়ন তার অপেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। সাথে এটিও প্রতীয়মান হয় যে তিনি 'প্রক্টর' হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখেন না। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি প্রক্টর স্যারের এধরণের বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি।"

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: ফেরদৌস রহমান বলেন, এ পর্যন্ত প্রশাসনের কাছে একটা অভিযোগ এসেছে। সেখানে রেজাল্ট টেম্পারিং এর কথা বলা হয়েছে। আমরা এটার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করবো এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্তের ফলাফল জমা দেওয়ার জন্য বলা হবে। যৌন সংক্রান্ত যে ব্যাপারগুলো ফেইসবুকে লেখালেখি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত দুইটা লাইনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নি। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ দেয় সাথে সাথে প্রশাসন এটার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবে, এখানে কোন ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোন অভিযোগ পায় নি, কারো বিরুদ্ধেই না। এসময় প্রক্টর আরো বলেন, "ফেইসবুক ফাঠায় ফালাচ্ছে, খবরে নিউজ হচ্ছে কিন্তু কারো কোন সৎ সাহস নাই যে আমাকে যৌন হয়রানি করছে? কেউ দুই লাইন লিখে দিতে পারে না?" তারপরই তিনি এ বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন। বলেন সেও মজা নিছে, সেও মার্কস নিছে। যে শিক্ষকই হউক না আমি হলেও আমার হলেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিক। অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই তার নিরাপত্তার স্বার্থে সকল তথ্য গোপন থাকবে।

আবীর

×