ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ফেনীতে ৭০ ভাগ নলকূপে মিলছে না পানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী

প্রকাশিত: ২০:১৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ফেনীতে ৭০ ভাগ নলকূপে মিলছে না পানি

তাপ্রবাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে ফেনী জেলা। জেলার ৬ উপজেলার নলকূপ, পুকুর-খাল, বিলসহ কোথাও নেই পর্যাপ্ত পানি। প্রচণ্ড খরতাপে চারদিকে যেন ধু-ধু মরভূমি। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন স্থানীয়রা। টানা কয়েক মাস অনাবৃষ্টির কারণে জেলার ৭০ ভাগ গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি ওঠছে না বলে জানায় জনস্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ জানায়- ফেনী জেলায় সরকারি নলকূপের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৭১টি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। চালু থাকা ২৬ হাজার ৯৪১টি নলকূপের তিন ভাগের দুইভাগেই পানি উঠছে না। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত দুই লক্ষাধিক অগভীর নলকূপেরও পানি ওঠে না। এ ছাডা সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলা নদীমাতৃক হওয়ায় এসব এলাকার অধিকাংশ টিউবয়েলে লবণাক্ত পানি উঠছে বলে জানা গেছে। ফুলগাজী উপজেলার জি এম হাট ইউনিয়েনের শরীফপুর গ্রামের কাজী বাড়িতে ১৬ এপ্রিল সরেজমিন দেখা যায় বাড়িতে বসবাস করেন ১১টি পরিবার। তাদের ১১ পরিবারের মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে বসানো পাঁচটি টিউবওয়েল রয়েছে। এসব টিউবওয়েলের একটিতেও মিলছে না সুপেয় পানি। তাই বাড়ির নারী-পুরুষ সকলের খাবার পানি ও রান্নাবান্নার পানি সংগ্রহে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই ইউনিয়নের বসিকপুরের বাসিন্দা আনিস আহমেদ জানান, এই জিএমহাট ইউনিয়নের শরিফপুর, শ্রীপুর গ্রামের ৩৫টি গভীর নলকূপের একটিতেও মিলছে না সুপেয় পানি। তাই খাবার পানি ও রান্নাবান্নার পানি সংগ্রহে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। দূর-দূরান্তের জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে সেগুলো রান্না-বান্নাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন স্থানীরা ।
ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের লেমুয়া বাজারের ব্যবসায়ী নেতা মোস্তফা হোসেন জানান-বাজারে ৩টি চাপকল ও ১০/১২টি পানি তোলার মোটর রয়েছে।এসব চাপকল ও পানির মোটর থেকে পানি ওঠে না। এ ছাড়া আশপাশে অনেক টিউবওয়েলেও পানি ওঠে না।
ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠানগড় ইউনিয়নের পাঠান নগর এলাকার খোকন চন্দ্র পাটোয়ারী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের  ভেতরের গভীর নলকূপটি তিন বছর যাবৎ নষ্ট পানি ওঠে না। পানির স্তর  নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়েনের রানীরহাট এলাকার কৃষক দিদারুল আলম জানান, তারা  নিজস্ব জমিগুলোতে এবার স্কিম ধানের চাষ করেছে কিন্তু পানির অভাবে ধানের থোড় এখন ভুসি হয়ে যাচ্ছে। পুকুর, জলাশয়ের ও খালের পানি শেষ হওয়ায় সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিএডিসির কৃষি জমিতে পানি দেওয়ার কথা থাকলেও এখন দিতে পারছে না। পরশুরামের কৃষক আবু আহাম্মদ জানান, ৫ একর জমিতে ধান করেছেন। কিন্তু পানির না পাওয়ার কারণে সব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশপাশের নদী-নালা-খাল-বিল সব শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই। ফেনী পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি নজরুল বিন মাহমুদুল বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পুকুরের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক জানান, গত ৫ মাস অনাবৃষ্টির পাশাপাশি গরমের তীব্রতা বাড়ায়  ভূগর্ভে পানির স্তর  অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। এ ছাড়া জেলার দাগনভুঞা উপজেলার নলকূপের পানিতে লবণাক্তের জন্য পান করা যাচ্ছে না। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে বিকল্প ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করার কথা জানান তিনি।

প্যানেল

×