ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

টঙ্গীতে মর্মান্তিক শিশু হত্যাকাণ্ড: পুলিশ বলছে, নিজের সন্তানদের খুন করেছে মা !

নূরুল ইসলাম তালুকদার, টঙ্গী

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৯:২০, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

টঙ্গীতে মর্মান্তিক শিশু হত্যাকাণ্ড: পুলিশ বলছে, নিজের সন্তানদের খুন করেছে মা !

ছবি: সংগৃহীত

টঙ্গীর আরিচপুরে রুপবানের মার টেকে শুক্রবার বহুতল সেতু ভবনের দ্বিতীয় তলার নিজ ফ্লাটে ৪ বছরের শিশু আবদুল্লাহ ও ৬ বছরের মালিহা দুই ভাইবোনের নৃশংস হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তার নির্দিষ্ট কোন কুলকিনারা পাওয়া না গেলেও গাজীপুর মহানগর পুলিশের কর্মকতারা বলছেেন নিহতদের মা আলেয়া বেগম (৩০) ওরফে সালেহা বেগম মানুষিক ভারসাম্য ছিলেন। নিহতদের মা এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা। শুক্রবার বিকালে জোড়া সন্তান হত্যাকান্ডের ঘটবা ঘটলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

এদিকে শনিবার টঙ্গী পূর্ব থানায় গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার এন এম নাসির উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। নিহত শিশুদের বাবা আব্দুল বাতেন বাদি হয়ে শনিবার টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে অজ্ঞাত ব্যক্তি এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার( অপরাধ) দক্ষিন নূর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, হত্যায় ব্যবহৃত বটি জব্দ করা হয়েছে। আলেয়া বেগম নিজ শিশুদের হত্যার দায় কিছুটা স্বীকার করেছেন। নিজ সন্তানদের হত্যা করতে গিয়ে তিনি হাতে আঘাতও পেয়েছেন। তবে কেনো তিনি নিজ সন্তানদের হত্যা করেছেন সে বিষয়ে কোন কিছু বলছে না মা সলেহা বেগম। শনিবার রাতে তাকে থানায় ফের ব্যাপক জিজ্ঞেসাবাদ শেষে রোববার সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মা সলেহা বেগমকে সন্তান হত্যায় আসামি হিসাবে আদালতে পাঠানো হবে।

পুলিশ বলছে, উক্ত ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহসহ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং পারিবার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমান, উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের তথ্যের ভিত্তিতে বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০) কে সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেফতার করিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয় যে, বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০) এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। তবে হত্যাকান্ডের কারণ উদঘাটনে আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে।

শুক্রবার হত্যাকান্ডের পর শিশুদের বাবা-মাকে থানায় এনে হত্যার ঘটনার কারণ জানতে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের করা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মা আলেয়া বেগম ওরফে সালেহা (৩০) দুই শিশুকে বটি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল রুমান বলেন, শিশুদের বাবা-মাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যার সঙ্গে মা আলেয়া বেগমের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

এদিকে জোড়া হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ একজন জন আসামী গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে টঙ্গী পূর্ব থানার মামলা নং-৩৪, তারিখ-১৯/০৪/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড উল্লেখ করে পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী বাতেন মিয়া (৪৬), পিতা-বাচ্চু মিয়া, মাতা-শাহিদা খাতুন, স্থায়ী গ্রাম-তাতুয়াকান্দি, থানা-বাঞ্ছারামপুর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্তমান গ্রাম- পূর্ব আরিচপুর জামাই বাজার রুপবানের মারটেক জনৈক সারোয়ার হোসেনের ৮তলা সেতু বিল্ডিং এর ২তলার ৩/এ ফ্ল্যাট, থানা-টঙ্গী পূর্ব, গাজীপুর মহানগর এজাহারের মাধ্যমে জানান যে, বাদী তাহার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩০), বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (০৯), ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার (০৬) ও এক ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (০৩) দের নিয়ে বর্তমান ঠিকানার বাসায় বসবাস করছেন।

গত ১৮/০৪/২০২৫ তারিখ দুপুর অনুমান ০২.৪০ ঘটিকার সময় বাদী গাড়ীর কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন সাহারা মার্কেট এলাকায় চলে যায়। বাদী বের হয়ে যাওয়ার পরপরই তাহার বড় মেয়ে বর্ষা আক্তার ফাতেমা (০৯) বাসা থেকে বের হয়ে তার বড় চাচার বাসায় যায় তখন বাদীর স্ত্রী আলেয়া বেগম ও ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার ও ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বাসায় ছিল।

গত ১৮/০৪/২০২৫ তারিখ দুপুর অনুমান ০২.৪০ ঘটিকার পর হতে বিকাল অনুমান ০৪.৪৫ ঘটিকার মধ্যবর্তী যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামী/আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সকলের অগোচরে বাদীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন পূর্ব আরিচপুর জামাই বাজার রুপবানের মারটেক জনৈক সারোয়ার হোসেনের ৮তলা সেতু বিল্ডিং এর ২তলার ৩/এ ফ্ল্যাটের রুমে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দ্বারা বাদীর ছোট মেয়ে মালিহা আক্তার (০৬) ও  ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(০৩) দ্বয়ের গলা কাটা সহ শরীরের একাধিক স্থানে গুরুত্বর আঘাত করে হত্যা করে। টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্তের চেষ্টা করে। 

আসিফ

×