
ছবিঃ সংগৃহীত
বাগেরহাটে পাকা ধান ঘরে তোলার সময় ঝড়-বৃষ্টিতে বোরো চাষিরা দারুণ বিপাকে পড়েছেন। গত তিনদিন ধরে এ অঞ্চলে মাঝে মধ্যে ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার অনেক স্থানে ধান ঝড়ো বাতাসে নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষেতে পানি জমেছে। আবার কাটা ধান বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে বসেছে। শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সবমিলিয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন সত্ত্বেও চাষিরা দুর্বিপাকে পড়েছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাগেরহাট জেলার সর্বত্র বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান ঘরে তোলার মৌসুম। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে প্রতিদিন। অনেক এলাকায় ধান বৃষ্টি শুরুর আগে কাটা শুরু হলেও এ জেলার ৪০ শতাংশ ধান কাটা এখনো বাকি রয়েছে। আবার অসংখ্য চাষির ধান কাটা অবস্থায় মাঠে রয়েছে। পাকা ধান ভিজে যাওয়ায় কৃষকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ-পরিচালক মো: মোতাহার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, 'এবার বাগেরহাট জেলায় ৬২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু চাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ৭’শ ৭৬ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১০৪%। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,৩৬,৭৯০ মেট্রিক টন চাউল। বাম্পর ফলন হওয়ায় অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ধান কেটে ঘরে তোলার সময়ে গত দুই-তিন দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে কৃষক কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। তবে এখন আর বৃষ্টিপাত না হলে এবং জমিতে পানি জমে না থাকলে তেমন একটা ক্ষতি হবে না।’ এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তদারকী চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে চিতলমারী, শরণখোলা, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া ও বাগেরহাট সদরের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু কিছু এলাকায় অতিবৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে বা শুয়ে পড়েছে; আবার কোথাও কাটা ধান ভেসে গেছে, ঝড়ো বাতাসে ধান ঝরে গেছে। তিন চার দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমেছে।
বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে গন্ধ হয়ে গেছে ধানে। বৃষ্টি ভেজা ধান ও গাছে আক্রমণ করেছে ছত্রাক। শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর (অঙ্কুরোদগম) হচ্ছে। ফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না বলে শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও।
সদরের গোটাপাড়া এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও চিতলমারীর কৃষক শেখর ভক্ত জানান, "বৃষ্টিতে তাদের মাঠের অধিকাংশ পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। ভালোভাবে পাকার আগেই অনেকে ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার দিনমজুর না পাওয়ায় অনেকে ধান কাটতেও পারেননি। আবার শ্রমিকেরা ভিজে ধান কাটতে ও বহন করতে অতিরিক্ত মজুরী দাবী করছে। ফলে কৃষক শেষ সময়ের ঝড়-বৃষিতে মহাবিপাকে পড়েছেন। তাদের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই।’’
কৃষক বাচ্চু মল্লিক, মহিতুল ইসলাম, আমীর আলী, ভজন বিশ্বাস, মদন দেবনাথ জানান, "কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার পাকা ধানের ক্ষেতে পানি জমেছে। সেই বিঘার পর বিঘা জমির ধান হেলে পড়েছে। কাদা বা পানি জমে থাকা ক্ষেত থেকে ধান কাটতে চাচ্ছে না বেশিরভাগ শ্রমিক। কেউ রাজি হলেও পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছে কৃষক। এমন জমি থেকে ধান কাটতে শ্রমিকদেরও অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে।’’
ধান কাটতে আসা ছাত্তার শেখ, মানিক হোসেন, রসুল গাজী, আবদুল জব্বার, দুলাল মিস্ত্রীসহ অনেক দিনমজুর জানান, 'ধান গাছ ভিজে যাওয়ায় সেগুলো কাটতে ও বহন করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। আগে যেখানে শুকনো ধান এক সঙ্গে ২০ গ-া বহন করা সম্ভব হতো, সেখানে ভেজা ধান নেওয়া সম্ভব ১২/১৩ গ-া। এতে সময় ও শারীরিক পরিশ্রম দুই-ই বেড়ে গেছে। তাই শ্রমের দামও বেড়েছে।’
ইমরান