ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাউফলে গ্রুপিংয়ে বিপর্যস্ত বিএনপি, হতাশ নেতাকর্মীরা

কামরুজ্জামান বাচ্চু, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী।।

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

বাউফলে গ্রুপিংয়ে বিপর্যস্ত বিএনপি, হতাশ নেতাকর্মীরা

বাউফলে ত্রিধারায় বিভক্ত বিএনপি নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তাদের হতাশার কথা প্রকাশ করেছেন।

বাউফল আসনটি একসময়ে পতিত আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসাবে পরিচিত থাকলেও এই দুর্গে ফাটল ধরান সহিদুল আলম তালুকদার। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলেও মাত্র ১৬ ভোটে হেরে যান। এরপর ২০০১ সালে তিনি বিএনপির এমপি নির্বাচিত হন। দলের মনোনয়ন আর ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের এই দুর্গ ভেঙ্গে খানখান করে দেন।

ওয়ান ইলেভেনের সময় সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদারকে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। প্রহসনমূলক বিচারে তাকে সাজা দেয়া হয়। যে কারণে তিনি আর পরবর্তী কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

এরপর বাউফল বিএনপির হাল ধরেণ  দি ডেল্টা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের  চেয়ারম্যান ও দানবীর  ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার। তিনি বিএনপির দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের  ছায়া দিয়ে রেখেছেন। তিনি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও হেরে যান। তার এই হারের পিছনে বিএনপির সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদারকে দায়ী করেন তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ওই সময় সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ফিরোজ আলমের পক্ষ হয়ে কাজ করেন।

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে বাউফল উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে ধরে রাখলেও একপর্যায়ে তিনিও দলের হাল ছেড়ে দেন। এই হাল ছেড়ে দেয়ার পিছনে কারণ ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। তার সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। এরপর ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ  তালুকদার বাউফলে আসা বন্ধ করে দেন। ২০২২ সালে বাউফল উপজেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর ফারুক আহমেদ তালুকদারের অধ্যায়ের অবসান ঘটে।

এরপর দলের হাল ধরেণ বিএনপির পোড় খাওয়া নেতা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মিয়া ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অলিয়ার রহমান। শাহজাদা মিয়াকে আহ্বায়ক ও অলিয়ার রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি  অনুমোদন দেয়া হলেও  অল্প দিনের মধ্যে তাদেরকে দল থেকে  অব্যাহতি দিয়ে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া আব্দুর জব্বার ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় আপেল মাহমুদ ফিরোজকে। তারা দুইজন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মু.মনির হোসেনের অনুসারী। তার বাবা  আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া হচ্ছেন বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। যে কারণে বাউফল  বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে এই বাবা- ছেলের দিক নির্দেশনায়। এভাবে  ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে যায় বাউফল উপজেলা বিএনপি।

গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর সাবেক এমপি সহিদু আলম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক এলাকামুখি  হতে শুরু করেন। আলাদা আলাদা ভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা  করে আসছেন।  দিন যতই  গড়াচ্ছে তাদের  গ্রুপিং ততোই বাড়ছে। এর ফলে  তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য অনেক নেতাকর্মীরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

পর্যবেক্ষক মহলের  বক্তব্য  যত দ্রুত এই গ্রুপিং বন্ধ করা যাবে, ততোই বিএনপির জন্য ভালো হবে।  তা না হলে পরিণতি ভালো হবেনা।  

সজিব

×