ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সোনালি স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

বাগেরহাটে ২১ কেজি বীজে ২২১ মণ ধান

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

বাগেরহাটে ২১ কেজি বীজে ২২১ মণ ধান

বাগেরহাটের ফকিরহাটে ব্রি-১০৮ ধান চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য

চার বিঘা জমিতে মাত্র ২১ কেজি বীজধান বপন করে ২২১ মণ ধান পেয়েছেন বাগেরহাটের ফকিরহাটের বাগিরদিয়া ব্লকের কৃষক মোস্তফা হাসান। চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদিত এ ধানের বাজার মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক জাত ব্রি-১০৮ ধান চাষে এ অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এখানে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে সোনালি বর্ণের এই ধান। স্বল্প খরচে অধিক ফলন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় এ ধানে সোনালি স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, ইউটিউবের মাধ্যমে ধানের বীজ সম্পর্কে জানতে পারেন কৃষক মোস্তফা হাসান। পরে শেরপুর থেকে ৩শ টাকা কেজি দরে ২১ কেজি বীজধান সংগ্রহ করেন। চার বিঘা জমিতে খেতমজুর, জমি চাষ, সার, ওষুধ ও সেচ খরচ মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করেন তিনি। সার ব্যবস্থাপনা কম লাগায় এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় অধিক লাভের আশা তার।
ইতোমধ্যে ধান পেকে গেছে। এক শতক জমির ধান নমুনা কর্তনে ৪৫ কেজি ধান পেয়েছেন। যার মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৬শ টাকা। এখন বাকি ধান কাটা চলছে। উপজেলার বাহিরদিয়া ব্লকে কৃষক মোস্তফা হাসানের ধান দেখতে আশেপাশের অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে ধান দেখতে এসেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তাসহ কৃষি বিভাগের লোকজন কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বীজের জন্য ২০ মণ ধানের চাহিদার কথা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন সেন বলেন, ‘সোনালি রঙের ব্রি-১০৮’ জাতের ধানটি এই উপজেলায় প্রথম চাষ হয়েছে। সম্ভবত জেলায়ও প্রথম হবে।
এ ধানের চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন। ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু হওয়ায় উচ্চমূল্যের জিরা ধানের বিকল্প হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। একদিকে উৎপাদন খরচ কম, অন্যদিকে অধিক দামের কারণে ইতোমধ্যে ধানটির প্রতি ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে।’ কৃষক মোস্তফা হাসান বলেন, ৪ বিঘা ৫ শতক জমিতে ব্রি-১০৮ ধান চাষের সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা লাভ হবে। এ অঞ্চলে প্রথম চাষেই সাফল্য পাওয়ায় অনেক চাষি এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের সহযোগিতা করতে চান তিনি। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ব্রি-১০৮ হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবিষ্কৃত সর্বাধুনিক জাতের ধান। এ ধানটি অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি উৎপাদন হয়। প্রতি গোছায় গড় কুশির সংখ্যা ১৬/১৭টি। দানার পুষ্টতা শতকরা ৮৮.৬ ভাগ। চালে প্রোটিনের পরিমাণ ৮.৮ ভাগ যা অন্যান্য চালের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।’
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবাগত উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত স্বল্প খরচে অধিক ফলন হওয়ায় এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এ ধানের চাষ আগামী মৌসুমে ব্যাপকভাবে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হবে। অন্যান্য কৃষকের মাঝে ধানটি ছড়িয়ে দিতে এই খেত থেকে সরকারিভাবে বীজ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।’

প্যানেল

×