ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

আড়িয়ল বিল

ধান কাটা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ধান কাটা উৎসব

বিলের পাকা ধান কেটে মাড়াই করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর আংশে বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিলে পাকা ধান কাটা শুরু করেছেন প্রান্তিক কৃষক। ধান কাটা, মাড়াইও, ঝাড়াসহ বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন। বিশাল কৃষি কর্মযজ্ঞে শ্রমিকের পাশাপাশি রিপার মেশিন, বোঙ্গা ও আধুনিক হারভেস্টারের ব্যবহার হচ্ছে সমান তালে। আড়িয়ল বিলপাড় এলাকার শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর, কাশেমনগর, গাদিঘাট, শ্যামসিদ্ধি, আলমপুর, লস্করপুর, বাড়ৈখালী, শ্রীধরপুর, মদনখালীর কৃষক পরিবারগুলো সোনালি ফসল ঘরে তোলার জন্য ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছেন। শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, উপজেলায় প্রায় ১০  হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ধান চাষ করা হয়েছে। আড়িয়ল বিলে কৃষকের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৭ শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে ধান বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রদর্শনী  ক্ষেতের সংখ্যা ৩০টি। উপজেলায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় ধান চাষিরা বলেন, গেল বারের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি গন্ডা (৭ শতাংশ) জমিতে কমপক্ষে ৫-৬ মণ ধান পাওয়া যাচ্ছে। এলাকায় ভেজা ধানের মণ ১২০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। আড়িয়ল বিলের অধিকাংশ জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। বালাশুর কাশেম নগরের দানেশ বেপারী নামে এক কৃষক বলেন, প্রতি গন্ডায় তার ৬ মণ ধানের ফলন হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। কাটা ধানের ৬ ভাগের ১ ভাগ ধান শ্রমিকরা মজুরি হিসেবে নিচ্ছেন। প্রতিকানি নিজস্ব জমিতে ধান আবাদে তার খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। সমপরিমাণ এগ্রিমেন্ট জমিতে ব্যয় খরচ ধরা হচ্ছে ৬০-৬৫ হাজার।  কয়েক শ্রমিক বলেন, বৈশাখ মাসজুড়ে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন জমিতে ধান কাটবেন তারা। এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের জমিতে কাটা ধান মাথায় করে  লোকালয়ের কাছাকাছি আনতে হচ্ছে। আবার খাল সংলগ্ন জমিতে কাটা ধান নৌকায় করে আনছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়িয়ল বিলে ১ মাসের মধ্যে কৃষকের পাকা ধান কাটা সম্পন্ন হবে। অপরদিকে উপজেলার অন্যান্য চকগুলোতে ধানের শীষ এসেছে। এসব ধান কাটতে প্রায় দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে।  এর কারণ হিসেবে জানা যায়, এসব কৃষি জমিগুলো নিচু হওয়ার ফলে ধানের চারা রোপণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের।
গুরুত্বপূর্ণ খাল-জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতাই এর অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। আড়িয়ল বিল এলাকার কৃষকদের দাবি, আড়িয়ল বিলের সংযুক্ত খাল হিসেবে পরিচিত শ্রীনগর-শ্যামসিদ্ধি খাল, গাদিঘাট-ভেন্নি খাল, শ্রীনগর-আলমপুর খাল, বাড়ৈখালী-মদনখালী খালগুলোর নব্য হারিয়েছে। এসব শাখা খালগুলো পদ্মা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হলেও এই মৌসুমে খালে পানি নেই। এই অঞ্চলে কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো পুনঃখননের দাবি তাদের।

প্যানেল

×