
কুড়িগ্রাম : উলিপুরে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের রসূলপুর মার্কাজ জামে মসজিদ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদের তীরবর্তী মানুষ। এক সপ্তাহে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৭২ বিঘা ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক ও সাতটি বসতভিটা নদে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে রসুলপুর মার্কাজ জামে মসজিদ, রসুলপুর আলহাজ রোস্তম আলী নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, রসুলপুর ঈদগাহ মাঠসহ বসতঘর।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের শিকার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা ও হাতিয়া ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষ। বছরের পর বছর নদীর ভাঙনে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই অসহায় দিন কাটাচ্ছেন। এতদিন ভাঙন হতো বর্ষা মৌসুমে। তবে এখন নদী ভাঙছে শুষ্ক মৌসুমে। নদীতে পানির স্রোত নেই, অথচ পাড় ভাঙছে।
ভাঙনকবলিত রসুলপুর এলাকার মিজানুর রহমান, নায়েব আলী, সাহেব আলী, হেলাল উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, রায়হান মিয়া, নূর আলমসহ অনেকের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে অসময়ে নদী ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে একদিন বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, গত চারদিনে আমার বাড়িসহ সাতজনের বাড়ি ও প্রায় শত বিঘা জমি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুকনো মৌসুম, এই সময়ে ভাঙনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন তিনি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, খবর পেয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করে ৫০০ জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
চাঁদপুরে ডাকাতিয়ার ভাঙন হুমকিতে জনপদ
নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর থেকে জানান, দীর্ঘ বছর ধরে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের উত্তর নানুপুর গ্রাম এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন অব্যাহত। এই ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ফলে এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক বসতবাড়ি এবং বহু ফসলি জমি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে। অনুমোদন হলে ব্যবস্থা নিতে পারবে। দেখা গেছে, নদীর হঠাৎ ভাঙনের কবলে পড়েছে নানুপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অংশ। ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার বহু বাড়িঘর ও ফসলি জমি। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে এই ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। ভাঙন রক্ষায় ১৭ এপ্রিল সকালে উত্তর নানুপুর গ্রামে নদী তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তারা ভাঙন প্রতিরোধে এবং পৈত্রিকভিটা রক্ষায় সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভাঙনের শিকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান পাটোয়ারি ও শাহাদাত তালুকদার বলেন, নদীর পাশে এই ফসলি জমিগুলো অনেক বড় ছিল এবং কৃষকরা ফসল আবাদ করতেন। বর্তমানে প্রত্যেকটি ফসলি জমি এমন অবস্থায় আছে যে আগামী বছর আর একটাও ফসলি জমি থাকবে না। যদি এলাকার অসহায় কৃষকের এই ফসলি জমিগুলো সম্পূর্ণ ভেঙে যায় তাহলে কীভাবে চলবে তাদের সংসার। আমরা ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মাজেদা, হনুফা ও রওশন আরা বেগম বলেন, বিগত দুই দশক ধরে আমাদের ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি ডাকাতিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বহু জনপ্রতিনিধি এসেছে, কিন্তু আমাদের ভাঙন প্রতিরোধে এগিয়ে আসে না। এখন সন্তানদের নিয়ে আমরা কোথায় যাব, কী করব বুঝতে পারছি না। বর্তমান সরকার যদি নদীভাঙন প্রতিরোধে এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম
ভাঙন বিষয়ে বলেন, ডাকাতিয়া নদীর কয়েকটি স্থানে নদীভাঙন প্রবণতা রয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই ভাঙন রক্ষায় কাজ করা হবে।
প্যানেল