
ছবি: জনকন্ঠ
ফেলনা হিসেবে পরিচিত জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা এখন রীতিমতো সম্পদে পরিণত হয়েছে। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কচুরিপানার মুন্ডু, তালপাতা, শন-সুতা ও পুরোনো পত্রিকা ব্যবহার করে প্রায় সাড়ে চার হাজার রকমের পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। এর মাধ্যমে সহস্রাধিক দুঃস্থ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারী হয়েছেন স্বাবলম্বী।
"সঠিক পারিশ্রমিক–সঠিক ব্যবসা"–এই মূলনীতাকে ধারণ করে বেসরকারি সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) স্থানীয় নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলছে। বর্তমানে আগৈলঝাড়ায় এমসিসির চারটি প্রকল্প– বাগধা এন্টারপ্রাইজ, জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস ও বিবর্তন এর মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বাগধা এন্টারপ্রাইজ:
১৯৮৪ সালে ২৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ প্রকল্পে শন-সুতা দিয়ে সুতলির ব্যাগ, সাইড ব্যাগসহ ৩৭১ প্রকার পণ্য তৈরি হচ্ছে। এখানে বর্তমানে ১২০ জন নারী কর্মী ও পাঁচজন স্টাফ কর্মরত। প্রকল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার, যা মূলত মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়।
এই প্রকল্পে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বাগধার শেফালী হালদার। তাঁর বড় ছেলে এখন ঢাকার বারডেম হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক– ডা. অমৃত লাল হালদার।
জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ:
১৯৮৪ সালে ৪৮ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ প্রকল্পে পরিত্যক্ত কচুরিপানা দিয়ে উন্নতমানের কাগজ তৈরি করা হয়, যেখান থেকে পুতুল, গিফট বক্স, কার্ডসহ তিন হাজারের বেশি পণ্য উৎপাদন হয়। এখানে প্রায় ৬০০ নারী কর্মরত এবং পণ্যগুলোর ৯৫% রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও নেদারল্যান্ডসে।
কেয়া পাম হ্যান্ডিক্রাফ্টস:
১৯৮৭ সালে এমসিসির ঋণ সহায়তায় ৭২ শতক জমির ওপর গড়ে ওঠা এ প্রকল্পে তালপাতা, মুলিবাঁশ ও কেয়াপাতা ব্যবহার করে ১৫০টির বেশি হস্তশিল্প পণ্য তৈরি হয়। পণ্যগুলো রপ্তানি হয় জাপান, ইউরোপ, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
বিবর্তন:
১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে বর্তমানে প্রায় ৬০০ নারী কাজ করছেন। প্রধান কাঁচামাল কচুরিপানা থেকে ২ হাজারের বেশি পণ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রেম, গিফট বক্স, খাম, রাইটিং প্যাড, কার্ড ইত্যাদি। পণ্যগুলো ইউএসএ, কানাডা, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। আয় থেকে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকদের মজুরি হিসেবে প্রদান করা হয়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক সজল দত্ত জানান, ঢাকার আসাদ গেটে “সোর্স” শো-রুমে এইসব পণ্য বিক্রি হয় এবং আড়ং ও বিভিন্ন বাণিজ্য মেলাতেও প্রদর্শন করা হয়। এমসিসির কার্যক্রম তদারকি করছে “প্রকৃতি” নামের একটি সংগঠন।
তিনি আরো বলেন, নারীরা প্রাচীণকাল থেকেই কুসংস্কার দ্বারাই বিশেষভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এমসিসি কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙ্গে সহায় সম্বলহীন দুঃস্থ, অসহায় ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের স্বাবলম্ভী করে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ সমাজ ও দেশকে উন্নত করার লক্ষে একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
যেকারণে অসংখ্য দুঃস্থ নারীরা আজ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আত্মমর্যাদার সাথে বেঁচে থাকাসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের জন্য রিতিমতো বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন।
খোকন/রবিউল