ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সৈয়দপুর বিমানবন্দর হচ্ছে আঞ্চলিক অ্যাভিয়েশন হাব

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৯:১০, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সৈয়দপুর বিমানবন্দর হচ্ছে আঞ্চলিক অ্যাভিয়েশন হাব

ছবি : সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর সৈয়দপুর দ্রুতই আন্তর্জাতিক রূপ পেতে যাচ্ছে। সরকারের ৩২৬০৫ কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় এ বিমানবন্দরসহ দেশের আরও সাতটি বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন চলছে পুরোদমে। ভৌগোলিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক সংযোগ সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের দিক থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এখন শুধু একটি আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব নয়, বরং এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার সূচনাস্থল।

 

 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণ করে সামরিক প্রয়োজনে। নির্মাণকাজে স্থানীয় বাঙালি হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে কাজ করানো হয়। অনেকের জীবন চলে যায় এই নির্মাণের বলি হয়ে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।

 

 

বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি ফ্লাইট পরিচালিত হয় ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬০০০ ফুট, যাত্রী ধারণক্ষমতা ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৬২০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নতুন টার্মিনাল ভবনে রয়েছে টিকিট কাউন্টার, ক্যাফে, স্ক্যানার, কনভেয়ার বেল্ট ও অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক বসার স্থান।

নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। হ্যাঙ্গার এলাকায় বর্তমানে পাঁচটি উড়োজাহাজ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, শিগগিরই তা বাড়িয়ে সাতটিতে উন্নীত করা হচ্ছে।

 

 

 ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা থাকলেও নতুন করে ৯১২ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সৈয়দপুর ও পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলায়।

সৈয়দপুরের আন্তর্জাতিক সংযোগের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে মাত্র ৩০-৫০ মিনিটে পৌঁছানো যায়। পাহাড়ি দেশের ছোট এয়ারস্ট্রিপগুলোতে বড় কার্গো বিমান নামানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সৈয়দপুরকে কেন্দ্র করে বড় বিমানে পণ্য এনে ছোট বিমানে সরবরাহের পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের পথে।

 

 

কুড়িগ্রামের সোনাহাটে ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। মাত্র ৮৭ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর বিমানবন্দর। এতে ভুটানের পাশাপাশি ভারত, চীন ও নেপাল এই অঞ্চল ঘিরে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে সৈয়দপুর হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের আঞ্চলিক সংযোগস্থল—a potential BBIN (Bangladesh, Bhutan, India, Nepal) air logistics hub।

 

 

উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নয়নেও সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি এক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের অনেক পর বিমানের ফ্লাইট ছাড়ে, এসির দুরবস্থা ও যাত্রাকালে বাজে গন্ধ যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমন সেবামান শুধু হতাশাজনকই নয়, দেশের ভাবমূর্তির জন্যও হুমকি।

 

সৈয়দপুর বিমানবন্দর শুধু একটি বিমান চলাচলের কেন্দ্র নয়, এটি হতে চলেছে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক রূপান্তরের চালিকাশক্তি। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলে শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান বাড়বে, যার সরাসরি সুফল ভোগ করবে রংপুর বিভাগের মানুষ। তবে উন্নয়নের পাশাপাশি যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা না গেলে এ সম্ভাবনার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
 

আঁখি

×