ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্বস্তির বৃষ্টি চলছে উত্তরাঞ্চলে

স্টাফরিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০০:১৭, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

স্বস্তির বৃষ্টি চলছে উত্তরাঞ্চলে

ছবি: জনকণ্ঠ

তাপদাহের পর নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলে চলছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে যেন ফসল ভরা মাঠ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের চা বলয়, সেচ নির্ভর বোরো ধান উৎপাদন, ভুট্টা সহ বিভিন্ন ফসলি জমি জেগে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাপমাত্রা কমে এসেছে, যা জনজীবনে এনেছে স্বস্তি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের সাথে উত্তর- পশ্চিম দিক থেকে শীতল বাতাস বইছে। 

কৃষকরা জানান, ‘আজ সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ভারি, কখনও মাঝারি কখনও বা গুড়ি গুড়ি  বৃষ্টিপাত চলছে।’ 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ দিন দুই দফায় বৃষ্টিপাত  পরিমাপ করা হয়। সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিভাগীয় শহর রংপুরে তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার। আবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দ্বিতীয়বার বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হলে সর্বমোট ৬৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। 

একইভাবে দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬১ মিলিমিটার, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৪৭ মিলিমিটার। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ভোরে ও সকালে বৃষ্টিপাত না থাকলেও দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।  বেলা তিনটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৬ মিলিমিটার, নীলফামারীর ডিমলায় ৩ মিলিমিটার ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২ মিলিমিটার। অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের  সূত্র মতে নীলফামারী শহরে ৪৬.৫ মিলিমিটার ও তিস্তার কাউনিয়ায় ৪ মিলিমিটার  বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

এদিকে বৃষ্টির স্পর্শে উত্তরাঞ্চলে সমতলের নীলফামারী, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও এর চা বাগানগুলোতে সজীবতা ফিরেছে।

চা চাষি নুরুজ্জামান , নসিব, শাহিন সহ অনেকে  জানান, প্রয়োজনীয় পানির অভাবে প্রাণ হারাতে বসেছিল বিভিন্ন চা-বাগানের চা-গাছ। দীর্ঘদিন খরার কবলে পড়েছিল সমতলের চা-শিল্প। বৃষ্টি না থাকায় প্রাকৃতিক জলধারা তৈরি হয়নি। ফলে প্রয়োজনীয় পানির অভাব দেখা দেয়।  বাগানের অংশে পর্যাপ্ত ছায়াবৃক্ষ না থাকায় রোদের তীব্রতা সহ্য করতে পারছে না চা-গাছ। পাতা পুড়ে গিয়ে গাছ মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তীব্র খরার কারণে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন চা-বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও ছোট চা- গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলাম না। এখন টানা বৃষ্টিতে চা-গাছগুলো নতুন করে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টির এই পানিটা আমাদের চা-গাছের জন্য খুব পুষ্টিকর। যদি প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হলে চা-পাতার স্বাস্থ্য অনুকূলে থাকবে না। লক্ষ্যমাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে গত মৌসুমে চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। এর আগে ২০২২ সালে উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি।

বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চায়ের বাগান গড়ে তোলে। এরপর থেকে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ক্ষুদ্র চাষি পর্যায়ে চা চাষ ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চগড় জেলার পর ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষ শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ১০টি ও অনিবন্ধিত ২০টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৭৪টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ১৯৭টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান (২৫ একরের কম) আছে।

২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে চা চাষ হলেও এবার কিছুটা কমেছে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ১১ হাজার ৫২৬ দশমিক ৮৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এদিকে উত্তরাঞ্চলের চা চাষের পরিধি ও উৎপাদন বিবেচনায় ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র (অনলাইনভিত্তিক) চালু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৫৩টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ২৮টি ও ঠাকুরগাঁও জেলায় একটি কারখানা চালু রয়েছে।



 

ববী/ সুরাইয়া

×