ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাঞ্ছারামপু‌রে ইউনুছ বিএসসির বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

সোহাইল আহমেদ, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

বাঞ্ছারামপু‌রে ইউনুছ বিএসসির বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ইউনুছ বিএসসি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী সুজন স্মৃতি কলেজ এবং আশপাশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, দখল, দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন কলেজের সভাপতি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ বিএসসি, তার ছেলে নুর মোহাম্মদ এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পবিত্র চন্দ্র মণ্ডল। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কলেজ মাঠ ভরাটের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত প্রায় তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি কেনার কথা ছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, ইউনুছ বিএসসি ও তার ছেলে নূর মোহাম্মদ স্থানীয় সেলিনা আক্তার নামের এক নারীর জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে জোরপূর্বক মাটি কেটে কলেজে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলেও ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম ও তার ভাগ্নের প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সেলিনা আক্তার। তিনি এখনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কলেজের মেয়াদি একটি এফডিআর ভেঙে ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন ইউনুছ বিএসসি ও তার ছেলে। নিয়ম অনুযায়ী, এই টাকা উত্তোলনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজি) অনুমতি প্রয়োজন হলেও কোনো অনুমতি ছাড়াই অর্থ তোলা হয়। এ অর্থ কোথায় ব্যয় হয়েছে, তার কোনো হিসাব কলেজ অফিসে পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, কলেজের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাদের বাদ দিয়ে ইউনুছ বিএসসি নিজের নাম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। মসজিদের জমি ও অন্যান্য জায়গার ভুয়া দানপত্র দেখিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠাতার পদ দখল করে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন।

২০২৩ সালের ২৬ মে কলেজ গভর্নিং বডির বৈঠকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ১ জুন ইউনুছ বিএসসির নেতৃত্বে আরেকটি সভায় ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে তার পছন্দের এক ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আয়া, অফিস সহায়ক ও অফিস সহকারী পদেও অযোগ্যদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধেও দীর্ঘদিন দায়িত্বে থেকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যরা।

ভুক্তভোগী সেলিনা আক্তার বলেন, “স্থানীয় থানায় মামলা না নেওয়ায় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজকোর্টে মামলা করেছি। আমি আমার জমির ক্ষতিপূরণ চাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

পিআইও পবিত্র চন্দ্র মণ্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় ও পারিবারিক বিরোধে জড়াতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।” বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জে বদলি হলেও তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কলেজ সভাপতি ইউনুছ বিএসসি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি মহল আমাকে হেয় করার ষড়যন্ত্র করছে। প্রকৃতপক্ষে কলেজের উন্নয়ন কাজ সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।”

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম ফারুক বলেন, “আমাদের দপ্তরে বিষয়টি লিখিতভাবে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে বোর্ড ও অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।”

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, “আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা দ্রুত বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।

সায়মা ইসলাম

×