
ছবিঃ সংগৃহীত
পঞ্চগড়ে ৫ বছরের ছেলেকে বিষ খাইয়ে মা নিজেও পান করেন বিষ। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঘন্টার ব্যবধানে মা ও ছেলে দুজনেই মারা যান। মায়ের নাম বিউটি আক্তার (২৮) ও তার ছেলের নাম মুসা (৫)। তারা পঞ্চগড় জেলা শহরের নিমনগড় এলাকার মতিউর রহমানের স্ত্রী ও ছেলে। স্বামীর অনলাইন জুয়ার আসক্তি ও সংসারে অভাব অনটনের কারণে পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি ওই নারীর পরিবারের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার স্বামী।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও বিউটি আক্তার দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মাইশার বয়স ১১ বছর। আর ছেলে মুসার বয়স ৫ বছর। মতিউর মসজিদে খাদেমের কাজ করতেন। পরে পঞ্চগড় বাসস্টান্ডে চা বিক্রি করতেন। ব্যবসায় বড় লোকসান হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। আসক্ত হয়ে পড়েন জুয়ায়। সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো। বিউটি স্বামীর এমন কর্মকাণ্ডে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
গত ১১ এপ্রিল মতিউর তার স্ত্রীকে না জানিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি যায়। সেখান থেকে মোবাইলে বিউটির সাথে বাকবিতন্ডা হয় তার। এর কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারের বিউটি তার ছেলে মুসাকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পান করেছে। তবে মেয়ে মাইশা পালিয়ে যাওয়ায় তাকে খাওয়াতে পারেনি। পরে তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
সেখানে তাদের অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু টাকার অভাবে তারা ঢাকায় না নিয়ে ১৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ২ টায় আবার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে মুসা ও তার এক ঘন্টা পরে মা বিউটি মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিউটির বাবা আব্দুল বারেক বলেন, ওদের পরিবারের অন্য কোন সমস্যা নেই। সমস্যা একটাই মতিউর জুয়া খেলে। কখনো রাতে বাড়ি ফিরে না। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হতো।
বিউটির মামা খোরশেদ আলম বলেন, ছেলেটি জুয়া খেলে সব শেষ করে ফেলেছে। আগে ভালো ব্যবসা করতো। তবে কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা আমরা জানি না।
অভিযোগ অস্বীকার করে মতিউর রহমান বলেন, আমি ব্যবসায় ৩ লাখ টাকা লোকসান করেছি। সংসারে অভাব তাই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। পাসপোর্টও করেছি। আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ায় তার সাথে আমার ও আমার শ্যালকের কথা কাটাকাটি হয়। আমার স্ত্রীর রাগ একটু বেশি। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনি আমার স্ত্রী আমার ছেলেকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পান করেছে। টাকা না থাকায় তাদের ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচএসএম সোহরাওয়ার্দী বিষ পানে মা ও ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা আত্মহত্যার কারণ জানার চেষ্টা করছি। পরিবারের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রিফাত