
ছবি: জনকণ্ঠ
পদ্মার তীরে জীবনের ছোট্ট ছোট্ট গল্পগুলো সব সময়ই সহজ-সরল নয়। নদীর জলে যেমন জীবন, তেমনি তার ঢেউয়ে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য ত্যাগ ও সংগ্রামের কাহিনী। তেমনই এক সংগ্রামী মানুষ হলেন আব্দুল জব্বার, গনি ও মাইউদ্দিনের ।
সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে পদ্মা নদীর চরে বসবাস করেন জব্বার। নদী ভাঙনে বহুবার বসতভিটা হারিয়েছেন। আবাদি জমি গিয়েছে নদীগর্ভে। স্বপ্নভঙ্গের পরেও থেমে থাকেননি জব্বার। নদীর বুকেই খুঁজে নিয়েছেন নতুন জীবিকার পথ মাছ ধরা।
তাঁর জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হলো ঝাড় জাল বা ক্ষেপলা জাল। প্রতিদিন সকাল-বিকাল নদীতে এই জাল ফেলে ছোট ছোট মাছ ধরেন। পদ্মার ছোট মাছ যেমন পুঁটি, টেংরা, খলসে কিংবা চিংড়ি এসব দিয়েই চলে তার সাতজনের সংসার। কখনো কখনো মাছ বেশি হলে বাজারে বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়।
মো. গনি ও মাইউদ্দিনের জীবনও একই রকম। মো. গনি’র ৩ মেয়ে ১ ছেলে। তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট্ট একটি ছেলে রয়েছে। এদিকে মাউিদ্দিনের বয়স প্রায় ৬৫ হবে। সংসারের আয়-রোজগার করার মত কেউ নেই। কারণ ছেলেরা নিজেদের মত চলে। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে এখনো পর্যন্ত সংসারের ঘানি টানতে হয়। তিনিও একাধিকবার নদী ভাঙনের কবলে পরে সকল আবাদি জমি ও বসতভিটা হারিয়েছেন। এখন বসতি গড়ে তুলেছেন পদ্মা নদীর মাঝে জেগে উঠা চরে। হাল-চাষ করার মত সামর্থ নেই তাই নদীর বুকে জাল দিয়ে মাছ শিকার করা একমাত্র আয়ের উৎস। কখনো একা, আবার কখনো যৌথভাবে দিন-রাত চলে মাছ শিকার।
জব্বার বলেন, "নদী আমাদের যা দেয়, তাই নিয়েই বাঁচার চেষ্টা করি। ভাঙনে সব হারিয়ে এখন এই মাছ ধরা ছাড়া আর কিছু করার উপায় নেই।"
সরকারি সহায়তা কিংবা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। অথচ এই সব জেলেরা নদী ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এদিকে মো. গনি ও মাইউদ্দিন বলেন, বয়সের শেষ প্রান্তে এসে আমরা এখন ক্লান্ত। ছোট বেলা থেকে প্রতিদিন সংসার চালানোর প্রয়োজনে অবসর নিতে পারিনি। পদ্মা নদীর একাধিকবার ভাঙনের কারণে থাকার মত কোন জায়গা জমি নেই। এখন পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। গড়েছি বসতি। আয় হিসেবে বেঁছে নিয়েছি নদীতে মাছ ধরা। এভাবেই চলে আমাদের জীবন। নদীতে মাছ বেশি থাকলে ভালো চলে, কম থাকলে কষ্টে চলে। তবে চলে যাচ্ছে কোন রকেমে।
এই পদ্মা নদীর বুকে শুধু জব্বার, গনি ও মাইউদ্দিনের জীবনের গল্প নয়। হাজার হাজার মানুষের ভাঙ্গা-গড়ার জীবন কাহিনী রয়েছে অজানা। পদ্মায় জেগে উঠা চরে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে হচ্ছে।
অবহেলিত এই জীবন সংগ্রামীদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। তবেই নদীর তীরের মানুষেরা বেঁচে থাকার নতুন আশায় বুক বাঁধতে পারবে।
মায়মুনা