ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৪, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি

ছবি: সংগৃহীত।

একুশে পদকজয়ী প্রয়াত কবি রফিক আজাদের বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ৷ বুধবার সকালে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রফিক আজাদের ধানমন্ডির বাড়ির পশ্চিমাংশ ভেঙে ফেলা হয়৷

তথ্যটি নিশ্চিত করে রফিকের স্ত্রী অধ্যাপক দিলারা হাফিজ বলেন, কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই বুধবার সকালে পুলিশ এসে আমাদের বাড়ির পশ্চিম অংশ ভেঙে ফেলে৷ এরপর তারা আমাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসবাবপত্র ও জরুরি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান মুলতবি করে৷

এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷

জানা যায়, চার ইউনিটের বাড়িটির একটিতে থাকছেন কবির স্ত্রী দিলারা হাফিজ। বাকি তিন ইউনিট অন্যদের নামে বরাদ্দ রয়েছে।

ধানমণ্ডির ১ নম্বর সড়কের ১৩৯/৪এ ঠিকানার বাড়িটিতে (পশ্চিমাংশ) কমবেশি ৫ কাঠা পরিমাণ জায়গা রয়েছে। ১৯৮৮ সালে একতলা এ বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় ‘এস্টেট অফিস’। দিলারা হাফিজ তখন ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বরাদ্দ কপিতে দেখা যায়, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক এম বেগমের স্বাক্ষর করা এ বরাদ্দনামায় উল্লেখ করা হয়, এই বরাদ্দের দ্বারা বাসার ওপর কোনো অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।

দীর্ঘদিন পর বাড়িটি নিজের বলে দাবি করেন সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে নিজের মালিকানার পক্ষে আদালতের রায় পান তিনি। এ নিয়ে সৈয়দ নেহাল, হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করে মামলা করেন দিলারা হাফিজ। এর ফলে আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেন। পরের বছর এই স্থিতাবস্থা স্থায়ী করেন আদালত।

পরবর্তীতে মামলাটি ঢাকার সপ্তম সহকারী জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। আগামী মে মাসের ২৫ তারিখ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। এইসব তথ্য উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পৃথক চিঠি দেন দিলারা হাফিজ। এর মাঝেই আজ বুধবার সকালে বাড়িটি উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়।

দিলারা হাফিজ শিক্ষা ক্যাডারের একজন প্রভাষক হিসেবে বাড়িটির বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সরকারি তিতুমীর কলেজে ৪ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। তার স্বামী রফিক আজাদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি-সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তাদের দুই সন্তান—অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ প্রবাসে রয়েছেন।

দিলারা হাফিজ বলেন, ২০১৬ সালে রফিক আজাদ মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা তার স্মৃতি রক্ষার্থে এই ভবনটি সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে বারবার চিঠি প্রদান করি৷ সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল আমরা উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের সঙ্গেও দেখা করি৷ তিনি আমাদেরকে জানান, এটা আইনের বিষয়ে, আইন নিজস্ব গতিতে চলবে৷ এরপর আমাদেরকে কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে বুধবার সকালে ভাঙার কাজ শুরু করে৷ তারা বাড়ি ফাঁকা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেননি৷
 

সায়মা ইসলাম

×