ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

নাচনাপাড়া চৌরাস্তা মাছ বাজার

ছয় বছরে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ছয় বছরে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

প্রতিদিনের মতো মাছ কিনতে আসা আমতলীর ব্যবসায়ী নুর হোসেন জানালেন তিনি আট হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনেছেন। এজন্য শতকরা পাঁচ টাকা হারে ৪০০ টাকা বিক্রেতাকে দিয়েছেন। এভাবে দৈনিক অন্তত দুই লাখ থেকে দশ লাখ টাকার মাছ এই মার্কেটে বেচাকেনা চলে। আবার মাছ যারা আড়তে বিক্রি করতে আনেন তাদের কাছ থেকেও শতকরা পাঁচ টাকা হারে টোল আদায় করা হয়।

এছাড়া এই মার্কেটের সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় চট কেন্দ্রিক। অর্থাৎ যারা মাছ বেচাকেনা করেন, তারা হাত বাই হাত জায়গা নিয়ে সেখানে মাছ মজুদ করে নিলাম ডেকে কেনাবেচা করেন। ওই নিলাম ডাকা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গার (চট) জন্য আয়তন ভেদে দৈনিক সর্বনিম্ন দেড় শ’ টাকা থেকে সাড়ে তিন শ’ টাকা দিতে হয়। এর জন্য একজন কালেকশন ম্যান রয়েছে। এভাবে অন্তত ৫০টি উচু চৌকির মতো (চট) রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদিন আদায় করা হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। মাসে তিন লাখ।

বছরে কমপক্ষে ৩৫ লাখ টাকা। আর কেনা বেচায় দুই ধাপে শতকরা ১০ টাকা হারে কালেকশন হয় দৈনিক আরো অন্তত ২০ হাজার টাকা। তাতেও বছরে লেনদেন হয় ৭৫ লাখ টাকা। নাচনাপাড়া চৌরাস্তা মাছ বাজার হিসেবে পরিচিত বাজারটির। সামনের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে নাচনাপাড়া মডেল মৎস্য আড়ত। এভাবে এই মাছ বাজার থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে আদায় করা হয়। বিগত ছয়টি বছরে এই মার্কেটটি থেকে অন্তত ছয় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। দৈনিক মাত্র তিন ঘন্টায় এই মার্কেটটি থেকে আদায় হয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অন্তত ছয় বছর আগে অবৈধ এই মার্কেটটি চালু করেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান শিমু। এখন আগস্ট পরবর্তী সময় শিমু নেই। কিন্তু তার চালু করা নগদ টাকা আদায়ের এই সিস্টেমটি সচল রয়েছে। শুধু আদায়কারী ও জমাকারী বদলেছে। বদলায়নি সিস্টেম। মূলত স্থানীয় দোকানি, ক্রেতা-বিক্রেতারা চায় এই মার্কেটটি বৈধ করে সরকারিভাবে বহাল রাখা দরকার। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চাহিদা পূর্ণ হবে।

কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ বাজার থেকে আদায় করা ফি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রভাবশালী চক্রের পকেটে চলে যাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ বাজারটি সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইজারা দিলেও গত ছয় বছরে অন্তত কোটি টাকার রাজস্ব পেত সরকার। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয়দের দাবি বাজারটির বৈধতা দেওয়া হোক, তাহলে সরকার বছরে অন্তত ১৫-২০ লাখ টাকার রাজস্ব পেত। নইলে সব ধরনের টোলফ্রি করা হোক।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। স্থানীয়রা জানান, মাছ বাজারটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে ইজারার মাধ্যমে জনস্বার্থে চালু রাখা দরকার রয়েছে।

আফরোজা

×