
বাংলা নববর্ষ মানেই শুধু নতুন ক্যালেন্ডার নয়, এটি বাঙালির চেতনায় রঙ ছড়ানো এক অনন্য উৎসব। আর সেই উৎসবের প্রাণবন্ত চিত্র দেখা গেল চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জের কাটাছরা ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামে। আজ ( ১৫ এপ্রিল) মঙ্গলবার বিকেলে নববর্ষকে কেন্দ্র করে এ গ্রামে বসেছে এক ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা, যার মূল আকর্ষণ ছিল লোকজ পালা ‘রাবণ বধ’।
প্রাচীন রামায়ণের কাহিনি যখন গ্রামীণ নাট্যমঞ্চে রূপ নেয়, তখন সেটি হয়ে ওঠে যেন এক ঐতিহাসিক পুনর্জন্ম। ঢাক-ঢোলের তালে তালে রাবণের পতনের দৃশ্য দর্শকদের নিয়ে যায় অতীতের বীরত্বগাথায়। গ্রামের খোলা মাঠে বাঁশের মঞ্চে আলোর ঝলকানির মাঝে পালার প্রতিটি চরিত্র যেন প্রাণ ফিরে পায় শিল্পীর কণ্ঠ, অঙ্গভঙ্গি ও আবেগঘন অভিনয়ে।
‘রাবণ বধ’ পালায় অংশগ্রহণকারী কুশীলবদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন: প্রিয়তোষ নাথ, সুমন দেব নাথ, মৃদুল দেব নাথ, মিন্টু কুমার নাথ, জয় দেব নাথ, অভি চন্দ্র নাথ, হৃদয় চন্দ্র নাথ, রুদ্র দেব নাথ, আকাশ দেব নাথ, স্বরূপ দেব নাথ, জয়ন্ত দেব নাথ, তন্ময় দেব নাথ, রিপন দেব নাথ, সঞ্জয় দেব নাথ, অভিষেক দেব নাথ, রিংকন দেব নাথ, সৈকত চন্দ্র নাথ, সৌমিক দেব নাথ ও হৃদয় দেব নাথ প্রমুখ।
এই বিশাল আয়োজনের পেছনে যাঁদের নিরলস শ্রম ও পরিকল্পনা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন—পরিচালক প্রিয়তোষ চন্দ্র নাথ, চন্দন চন্দ্র নাথ, মিহির কান্তি নাথ, বিকাশ চন্দ্র নাথ, সঞ্জয় কুমার নাথ, মানিক চন্দ্র নাথ, মৃদুল চন্দ্র নাথ, অনুপম চন্দ্র নাথ ও রবীন্দ্র চন্দ্র নাথ। উপস্থাপনায় ছিলেন সঞ্জয় কুমার নাথ (মাস্টার)।
এসময় যন্ত্রসংগীতে সঙ্গত দিয়েছেন- বাদল চন্দ্র নাথ, সুজন চন্দ্র নাথ, মৃদুল চন্দ্র নাথ,অনুপম চন্দ্র নাথ, সঞ্জয় কুমার নাথ, শিপন চন্দ্র নাথ, শয়ন চন্দ্র নাথ, সন্জয় চন্দ্র নাথ,তুহিন চন্দ্র নাথ, আশীষ চন্দ্র নাথ, বিধান চন্দ্র নাথ।
গ্রামীণ পালা ঢাকী দেখতে আসা প্রিয়াংকা ভৌমিক প্রিয়া, সাগর চন্দ্র দাশ ও সৌরভ নাথ, বলেন, এমন আয়োজনে শুধু গ্রামের মানুষই নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও হাজারো দর্শনার্থী উপস্থিত হন। গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির এক অনবদ্য মঞ্চ হয়ে ওঠে এই মেলাটি। হারিয়ে যেতে বসা লোকজ বিনোদনকে ধরে রাখার এমন প্রয়াস শুধু আনন্দ নয়, বাঙালির শিকড়কে ছুঁয়ে দেখার এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতাও।
এ ব্যাপারে আয়োজক কমিটির সদস্য মিহির কান্তি নাথ, বিকাশ চন্দ্র নাথ ও শিক্ষক সঞ্জয় কুমার নাথ বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এই অনবদ্য মিলনমেলা দেখতে প্রতিবছরই তেতৈয়া গ্রামে ভিড় করেন স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীরা। সময়ের সাথে হারিয়ে যেতে বসা লোকজ বিনোদনের এমন আয়োজন গ্রামবাসীর ঐক্য ও সংস্কৃতিপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
রাজু