ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

সোনারগাঁয়ে শুরু হলো ৩ দিনব্যাপী শতবর্ষী ’বউমেলা’

সোনারগাঁও সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:০০, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

সোনারগাঁয়ে শুরু হলো ৩ দিনব্যাপী  শতবর্ষী ’বউমেলা’

ছবি : জনকণ্ঠ

নারায়ণগঞ্জ  জেলার সোনারগাঁয়ে চলছে তিনদিন ব্যাপী বউ মেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে বউ মেলা শুরু হলো। মঙ্গলবার  (১৫ এপ্রিল) মেলার প্রথম দিনে মেলায় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।

 

এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। পুরানো এ বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউমেলা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ভট্টপুর জয়রামপুর গ্রামের আদি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে এ বউমেলা বসে।

 

 

প্রায় শত বছরের আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে দু’তিন সন্তানের জননীরা। তাদের সঙ্গে টুকটুকে রঙ্গিন ফুলেল সাজে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি থাকে বটবৃক্ষের দিকে। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনুসারী আবাল, বৃদ্ধ, বনিতাদের কোলাহল।

 

 

হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর  বৈশাখের দ্বিতীয়  দিনই পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে এ মেলা শুরু হয়। বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছর উপজেলা পরিষদের পাশে ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঐতিহাসিক বউমেলা বসে। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে  সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পদতলে (সনাতন) হিন্দু সম্প্রদায়ের শত শত নর-নারীরা বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে এ পূজায় অংশ নেন।  দিনভর ছিল লোকজনের ভিড়। আগামী বৃহস্পতিবার  এ মেলার শেষ দিন।

 

স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালী তলার এ বউমেলার জন্য। এ বিশ্বাসেই এখানে বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হন বউমেলায়। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে এবং সারা বছর সুখ শান্তিতে যেন দাম্পত্য জীবন কাটে- এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করেন হিন্দু নারীরা।

মঙ্গলবার  সকালে পূজার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হয় তিনদিনব্যাপী এ বউমেলা। মেলায় পূজা-অর্চনা ছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ মেলায় মৃৎ শিল্পীদের তৈরি নানা রঙয়ের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল পাওয়া যায়। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোকপণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। সোনারগাঁয়ের বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি।

সনাতন ধর্মাবলম্বীর অনেকের মতে, বউমেলায় পূজা-অর্চনা করলে পুরনো বছরের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বিবাদকে দুরে ঠেলে দিয়ে একজন বধূ স্বামী সোহাগিনী হয়ে উঠেন এবং নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধন-ধান্যে ভরে তুলতে পারেন। এখানে অনেক ভক্তদের দেবীর নামে পাঠা ও কবুতর উৎসর্গ করতে দেখা যায়। অনেকের বিশ্বাস বটমূলের মাটি শরীরের মাখলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এ স্থানের মাটি খুবই উপকারী মনে করে দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা মাটি সংগ্রহ করে থাকেন।

 


মেলায় আসা নববধূ সুমারাণী দাস, অন্জনা রানী  ও প্রসন্ন কুমার দাস জানান, সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমরা এ মেলায় পূজা করতে এসেছি। বড়দের কাছ থেকে শুনেছি এ মেলায় এসে পূজা-অর্চনায় স্বামী সন্তান ও সংসারের কল্যাণ কামনায় সফল হয়।উপস্থিত পুরোহিতগণ  জানান, বউমেলায় সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা এসে ভিড় করেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলায়। এবারে পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা হয়ে মেলা শুরু হয়।

 
বউমেলার আয়োজক কমিটির কর্মকর্তারা জানান, নবরূপে এসো নববর্ষ ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো’ নতুন বছর সবার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারও উৎসবে আমরা সিদ্ধেশ্বরী কালী পূজার আয়োজন করেছি।

 

 

সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জানান, সবার সহযোগিতায় এ বউ মেলায় পূজা অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাজানা  রহমান জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বউ মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেলা উপভোগ করতে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিম ধর্মের লোকজনও অংশ নেন।

আঁখি

×