
একটা সময় এই এলাকার পরিবারগুলো ছিল একান্নবর্তী পরিবার। সে সময় ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন গ্রামের বাসাবাড়ির উঠানে বা বাড়ির ভেতরে মাটির পাটের কূপ গৃহস্থালি কাজে খুবই ব্যবহার হতো। ছোটবেলায় আমরাও সেই কুয়া থেকে বালতি দিয়ে পানি তুলে গোসল করতাম।
মাটির পাটের পানির কূপের পানি ছিল খুবই শীতল। সেজন্য সে সময় মাটির পাটের পানির কূপের চাহিদা ছিল প্রচুর। সারাক্ষণ কুমাররা ব্যস্ত হয়ে পড়তো মাটির পাট পোড়ানোর কাজে। এই পেশার ভিত্তিতে ঝিনাইগাতী উপজেলায় কুমারপাড়া নামে এক গ্রাম গড়ে উঠেছিল।
এখন ঝিনাইগাতী এলাকায় আর দেখা যায় না মাটির পাটের পানি পানের কূপ। এই এলাকার মানুষের কাছে কূপ, কুয়া ও চুয়া নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এক সময়ের পান করা পানি সংগ্রহের কূপ।
রাজা-জমিদারদের আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও মানুষ কূপের পানিই ব্যবহার করে থাকত। গ্রামজুড়ে ১–২টি করে কূপ থাকত। সেই কূপগুলো থেকে গ্রামের সবাই পানি নিয়ে যেত, সেই পানি পান করাসহ রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকতো।
সেখানে পাড়ার গৃহিণীদের একপ্রকার মিলনমেলায় পরিণত হতো। এ পাড়ার গৃহিণীদের সঙ্গে ওই পাড়ার গৃহিণীদের সাক্ষাৎস্থলও ছিল বটে ওই কূপস্থল। ওই সময় বাড়ির গৃহিণীসহ মেয়েরা বিশেষ কাজ ছাড়া বাড়ির আঙিনার বাইরে যেত না। কূপ খননের পর কোনোটিতে বসানো হতো সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা রিং, আবার কোনোটিতে পোড়ামাটির রিং (পাট)। আবার কোনোটিতে গাঁথুনি দেওয়া হতো ইট দিয়ে। আবার কোনোটি শুধু খনন করে পানি সংগ্রহ করা হতো। অর্থাৎ সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করতো এসব কূপের ধরণ। এসব কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করার জন্য ব্যবহার করা হতো রশি আর বালতি। শুধু মাত্র মাটি খনন করে কূপের চতুর্দিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতো, যেন কোনো ছোট বাচ্চা বা ময়লা না পড়ে। কেউ কেউ পাটের রিং বসালে মাটির উপর হতে ৩–৪ হাত উপর পর্যন্ত অনেকে পোড়ামাটির রিং (পাট) নিত। ওই কাঁটা রশির মাথায় বেঁধে কূপের ভেতরে নামিয়ে তোলা হতো পড়ে যাওয়া বালতি। কূপ থেকে পানি তুলতে গিয়ে অনেকেই পড়ে যেত কূপের ভেতর।
বিশেষ করে শিশুরা এর শিকার হতো বেশি। গ্রামের প্রবীণ লোকেরা জানান, পানি সংগ্রহের জন্য গৃহিণীরা কূপস্থলে দল বেঁধে কাঁথে কলস ও হাতে বালতি নিয়ে যেত। এ প্রজন্মের গৃহিণীরা জানেনই না যে এক সময় কূপের পানি পান করা হতো। এখন আর নেই সেই কূপ। নেই কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করাও। গৃহিণীদের কোমরে আর কলসিও দেখা যায় না। বলতে গেলে এলাকায় আর দেখা যায় না পানি পানের কূপ। সেটি এখন শুধুই স্মৃতি আর এ প্রজন্মের জন্য অজানা ঐতিহ্য গাঁথা গল্প।
আফরোজা