
ছবি : সংগৃহীত
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে গত চার দশক ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী সহিংসতা। স্থানীয় দুই প্রভাবশালী নেতা বোমা কুদ্দুস ও বোমা জলিলের দ্বন্দ্বে এ পর্যন্ত আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বোমার আঘাতে শতাধিক মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এই সহিংসতার সূত্রপাত ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, যা পরবর্তীতে চরের জমি, নৌপথ ও মাছ শিকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র রূপ নেয়। স্থানীয়রা নিজেরাই বোমা তৈরি করে এই সংঘর্ষে অংশ নিচ্ছে, যেখানে ১০০টি বোমা বানানোর পারিশ্রমিক ৪০ হাজার টাকা। স্কুল, চর, নৌকা এমনকি বাড়িঘরেও বোমা বানানোর কারখানা গড়ে উঠেছে।
এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের জীবন যেন নরক। এক যুবকের পেটে ৩৭টি শার্পনেল বিদ্ধ রয়েছে, অন্যদিকে এক স্কুলছাত্র বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই আজীবনের জন্য হাত-পা হারিয়েছেন। সংঘর্ষ এতটাই তীব্র যে একবার টানা ১৬ দিন ধরে বোমাবর্ষণ চলেছিল। নারী ও শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মহিলারা পাহারা দিচ্ছেন, আবার শিশুরা বোমা বানানোর কাজে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়দের একটি বড় অংশ নিরাপত্তার অভাবে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন, যারা আছেন তারাও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে জীবন কাটাচ্ছেন।
প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। বোমা কুদ্দুস ও বোমা জলিলের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪৭ ও ৫০টি মামলা রয়েছে, কিন্তু তারা বারবার জামিনে বেরিয়ে এসে সহিংসতা চালিয়ে গেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাবেক এমপি মোজাম্মেল হোসেনের মতো নেতাদের আশ্রয়ে এই দুজন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। পুলিশের ব্যর্থতাও এখানে স্পষ্ট। থানার ওসি যদিও বলেছেন, "এরা রাজনীতির নামে অপরাধ করছে", কিন্তু স্থানীয়দের প্রশ্ন এত বছর ধরে কেন এই সহিংসতা থামানো যায়নি?
বর্তমানে দুজন নেতাই জেলে থাকলেও তাদের অনুসারীরা সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে। বিলাসপুরের এই রক্তাক্ত ইতিহাস শুধু স্থানীয় দ্বন্দ্ব নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীকে রক্ষার চিত্রও ফুটিয়ে তোলে। যারা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন, তারা ফিরতে চাইলে চান নিরাপত্তা। বাপ-দাদার ভিটে বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পাওয়া এখন তাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের অবসান কবে হবে, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
সূত্র:https://youtu.be/iLPixxToVY8?si=ac01hJEMir1JW30x
আঁখি