
ছবি: জনকণ্ঠ
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ছয়ঘাটি এলাকায় হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পুজার আয়োজন করা হয়েছে। চড়ক পূজা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বা চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বৈশাখের প্রথম দু থেকে তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার মহোৎসব চলে।এটি চৈত্র মাসে পালিত হিন্দু দেবতা শিবের গাজন উৎসবের একটি অঙ্গ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে উপজেলার ছয়ঘাটি এলাকায় চড়ক সংক্রান্তি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বাহারী খাবারের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন দোকানীরা।
এসবের মধ্যে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার, ঝুরি, জিলাপি, মিষ্টি, রস কদম, কালোজাম মিষ্টি, উখড়া অন্যতম।এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনার দোকানের সারিও দেখা মিলেছে এই চৈত্র সংক্রান্তি মেলায়।মেলায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সিসিবিভিও নামক প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার ছয়ঘাটি রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের আয়োজনে এ চড়ক সংক্রান্তি মেলায় আয়োজন করা হয়।২৭ তম চড়ক পুজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী -১ (গোদাগাড়ী -তানোর) এর মনোনয়ন প্রত্যাশি শিল্পপতি এ্যাড. সুলতানুল হক তারেক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল, সাধারণ সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের সভাপতি সুধীর সরেন,কাকন হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি শহিদুল ইসলাম, গোদাগাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেক, তারেক জিয়া প্রজন্ম দলের জেলা সহ- সভাপতি গোলাম মোর্ত্তজা দুলাল, গোদাগাড়ী পৌর যুবদল নেতা সাবিয়ার রহমান মিল্টন (বিশ্বাস) প্রমূখ।
চড়ক পুজাকে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।এরমধ্যে নীল পূজা, গম্ভীরা পূজা, শিবের গাজন, হাজরহা পূজা, হরব পুজা অন্যতম।
এসময় কয়েকটি কঠিন পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন মোংলা মার্ডী নামে এক আদিবাসী সন্যাসী। ১। ১৪ দিন উপোস থাকার পর তিনি জলন্ত আগুনে খালি হেটে যান নির্দ্বিধায়।এছাড়াও তাকে চরকিতে চড়িয়ে ঘোড়ানো হয়।
উল্লেখ্য, লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবারাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। পূর্ণ পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত গোবিন্দানন্দের বর্ষক্রিয়াকৌমুদী ও রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্বেও এ পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়।
জনশ্রতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন।কথিত আছে, এই দিনে শিব-উপাসক বাণরাজা দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সংগে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের প্রীতি উৎপাদন করে আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ গাত্ররক্ত দ্বারা শিবকে তুষ্ট করে অভীষ্ট সিদ্ধ করেন। সেই স্মৃতিতে শৈব সম্প্রদায় এই দিনে শিবপ্রীতির জন্য এ উৎসব করে থাকেন।
এই সব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত্যা বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়।
কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো তা প্রচলিত আছে।
শহীদ