
ছবি: জনকণ্ঠ
পাবনা-১ আসনের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার সেলিম হোসেন মানিক নামের একজন বাদী হয়ে মামলাটি বেড়া মডেল থানায় দায়ের করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার মামলাটি রেকর্ড করা হয়। তবে রোববার রাতে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল বিকেলে বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইরপাড়ায় আবু সাইয়িদের নিজ বাড়িতে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে আসামিদেরসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এজাহারে বলা হয়, সমাবেশে উপস্থিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এলাকার সদস্য ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করেন। তারা প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, বন্দুকসহ দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
মামলার সাক্ষী ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে সময় লেগেছে, এজন্য এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে—এমন উল্লেখ রয়েছে মামলায়।
আবু সাইয়িদকে প্রথম এবং সাঁথিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মিরাজুল ইসলামকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া পাবনা-১ আসনের আওতাধীন বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।
বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউর রহমান বলেন, “এটি একটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়ে ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন, কিন্তু পরাজিত হন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন এবং আবারও পরাজিত হন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি মাঝে মাঝে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় আসেন। এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তিনি বেড়ায় এসে নিজ বাড়িতে ১ এপ্রিল শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে তাঁর অনুসারী এবং আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেন এবং আবু সাইয়িদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তবে মামলায় নাম থাকা অনেকেই দাবি করেছেন, “আমাদের আবু সাইয়িদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই, আমরা সেখানে উপস্থিতও ছিলাম না।”
অন্যদিকে, মামলার বাদী সেলিম হোসেন মানিক জানিয়েছেন, তিনি বেড়া মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং এজাহারে যা লেখা রয়েছে, সবই সত্য।
শহীদ