
ছবি: সংগৃহীত
পহেলা বৈশাখ, বাঙালির প্রাণের উৎসব। চারদিকে রঙিন পোশাক, মুখরিত শব্দ, বর্ণিল সাজসজ্জা আর বৈশাখী মেলার আমেজ। ব্যস্ত শহর, গ্রাম কিংবা হাটবাজার- সর্বত্রই যেন উৎসবের রঙ ছড়ায়।
কিন্তু এই আনন্দের বাইরে রয়ে যায় কিছু মানুষ। তারা উৎসবের ছোঁয়া পান না, বরং দিনটি তাদের জীবনে এনে দেয় নতুন এক সংগ্রামের গল্প। তাদের চোখে নববর্ষ কেমন কাটে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এবারের প্রতিবেদন।
বৈশাখ আসে, উৎসব হয় - কিন্তু সমাজের এক প্রান্তে থাকা এই মানুষগুলোর জীবন একই থাকে। তারা শুধু দেখে, শোনে, ভাবে। সময়ের দাবি, বৈশাখ হোক সবার জন্য। উৎসবের আলো পৌঁছে যাক নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের কাছেও। উৎসবের বর্ণিলতা তখনই পূর্ণতা পাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর বাজার মোড়ে আনারস পেয়ারা বিক্রি করেন মো. ইয়াসিন। বয়স প্রায় চল্লিশের কোঠায়। বৈশাখের দিনটিতে রঙিন পোশাকে হাঁটতে থাকা মানুষের ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “সবাই মেলা করে, নতুন জামা পরে। আমি সকাল থেকে এক কাপ চা খেয়ে দাঁড়াই। কোনো দিন ভাল বিক্রি হলে রাতে মাছ অথবা ডিম আর ভাত খাওয়াই পোলাপানরে। নিজের জন্য কিছু থাকে না। আমিও তো মানুষ, আমারও খুশি হতে মন চায়।”
উপজেলা সংলগ্ন ব্রিজের একপাশে বসে থাকা ৭৪ বছর বয়সের বোরহান উদ্দিনের চোখে বিস্ময় আর অভিমান। আশেপাশে উৎসবের হুল্লোড়, অথচ তার হাতে শুধু এক আঁচলা ভিক্ষার থলে। তিনি বলেন, “ঈদ-বৈশাখ আসে যায়। আমারে কেউ একটা পান্তা-ইলিশের দাওয়াত দেয় না। মেলার আশপাশে একটু বেশি মানুষ থাকে, দয়া করলে কয়টা টাকা পাই। বড়লোকের উৎসব - গরিবের কষ্টের দিন।”
বাজারের পাশের দর্জির দোকানে কথা হয় পলাশ মিয়ার সঙ্গে। বৈশাখের আগে তার দোকানে অর্ডারের ভিড়। দিন-রাত কাজ করে জামা-কাপড় বানান। তিনি বলেন, “বৈশাখে আমি অন্যের নতুন জামা বানাই। নিজের জন্য একজোড়া নতুন কাপড় বানানোর সাধ থেকে যায়। দিনভর কাজ করি। বৈশাখের দিনও দোকান খুলে বসতে হয়। আমিও ইচ্ছা করে একদিন ঘুরে বেড়াই, কিন্তু সম্ভব হয় না।”
রিকশাচালক আব্দুল মতিন বলেন, “উৎসব তো ধনী মানুষের জন্য। আমাদের কাজ না করলে পেট চালাবো কি করে? এই দিনেও খরচ বাড়ে, বাজারের দাম বাড়ে। আমরা শুধু হিমশিম খাই। এই রোদ-ঘামে কাজ করে খাই, উৎসব দেখার সুযোগ কই!”
এ নিয়ে সমাজ গবেষক ড. নির্ঝর আহমেদ প্লাবন বলেন, “উৎসব সমাজের সবার। কিন্তু আমাদের দেশে উৎসবের বৈষম্য প্রকট। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বৈশাখ মানে বাড়তি খরচ আর সংগ্রাম। এই বৈষম্য কমাতে সামাজিক উদ্যোগ, সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি।”
মায়মুনা