ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রাব্বির মরদেহ গলাচিপায় দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ১৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১০:৪০, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রাব্বির মরদেহ  গলাচিপায় দাফন

ছবি: শহীদ রাব্বি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসা ছাত্র শহীদ রাব্বির (১২) মৃতদেহ ৯ মাস পর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশ-বাড়িয়ায় পুনরায় দাফন করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে গতবছরের ১৯ জুলাই ঢাকা মডেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে রাব্বি নিহত হয়। সেসময় তার লাশ মিরপুর দাফন করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর রাব্বির পিতার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শহীদ মো. রাব্বি মাতব্বর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জুয়েল মাতব্বরের ছেলে। সে ঢাকার মিরপুর এলাকার তা’লীমুল ইসলাম মাদরাসার হাফেজির ছাত্র ছিল।


রাব্বির পিতা জুয়েল মাতব্বর জানান, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে রাব্বি মাতব্বর মিরপুরের তা’লীমুল ইসলাম মাদরাসার হাফেজির ছাত্র থাকা অবস্থায় ১০পারা কোরান মুখস্থ করেছিল। ঘটনার দিন ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে নিজ মাদরাসার কাছাকাছি ঢাকা মডেল কলেজের সামনে  ছাত্র জনতার মিছিল যাচ্ছিল। এসময় রাব্বিসহ মাদরাসার কিছু ছাত্র সেখানে উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে  পুলিশ মিছিলকারীদের উপর গুলি শুরু করে। অন্য ছাত্রদের সাথে রাব্বিও দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি ভ্যান গাড়ির নীচে আশ্রয় নেয়। এসময়  পুলিশের একটি গুলি রাব্বির বুকে বিদ্ধ হয় এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রাব্বির লাশ  ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনতার প্রতিবাদে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। স্থানীয় জনগণ রাব্বির মৃতদেহ স্থানীয় আজমল হাসপাতালে  নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। 


জুয়েল মাতব্বর আরও জানান, ওই দিন রাতেই তিনি তার ছেলের লাশ নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় নিয়ে আসতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বাধা দেয় এবং উল্টো তাকে হুমকি দেয়। ছেলে কেন মিছিলে গেল এ জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে তিনি তার ছেলের লাশ ঢাকায় মিরপুর গোরস্থানে দাফন করেন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি শহীদ রাব্বির মৃতদেহ নিজ জেলা পটুয়াখালীতে নেয়ার জন্য জুয়েল মাতব্বর আদালতে আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে গত ১০ জুলাই শহীদ রাব্বির মৃতদেহ মিরপুর গোরস্তানের কবর থেকে উঠিয়ে শহীদ  সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। 

রবিবার (১৩ এপ্রিল) হাসপাতালের হিমাগার থেকে রাব্বির মৃতদেহ মর্গে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং রাতে শহীদ রাব্বির মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

রাতেই রাব্বির মরদেহ নিয়ে স্বজনরা পটুয়াখালীর নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।  

আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোররাতে রাব্বির মরদেহ তার নিজবাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরাস্তা এলাকায় এসে পৌঁছে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে শহীদ রাব্বিকে দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসাদুর রহমান। 

এদিকে শহীদ রাব্বি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক মো. বাশার

আবুবকর

×