
বৃহত্তর ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলাটি। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হলেও সবুজ প্রকৃতির আবরণ দিয়ে মোড়ানো এই সীমান্ত জনপদে রয়েছে হরেক রকমের ক্ষেতখামার। বিভিন্ন ফলফলাদির গাছগাছালি তো রয়েছেই, পাশাপাশি এখানে ধানচাষ নিয়ে ভরণপোষণ যোগায় হাজারো কৃষি পরিবার। এই ধানচাষে ভালো ফলনের আশায় কৃষকের স্বপ্ন বুনা নতুন কিছু নয়। এই বোরো মৌসুমে ধানের ফলন অন্য মৌসুমের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে অন্যরকম অনুভূতি দেখা গেছে।
ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে চোখ জুড়ানো শুধু সবুজ আর সবুজ। চারিদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নজর কেড়েছে চলতি মৌসুমের ধানের ফসলগুলো। কৃষকদের আগামীর সোনালি স্বপ্ন লুকিয়ে আছে এই সবুজের ধানখেতে। সেই আভা ছড়িয়ে পড়েছে এই ফসলের মাঠে। আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা এই সমারোহ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক।
ধানগাছের ঝলক দেখে অনুমান করা গেছে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই এই সোনালি ধান ঝলমল করবে কৃষকের বাড়ি। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে স্বপ্নভরা হাসি।
রত্নাপালং ইউনিয়নের কৃষক ফকির মিয়া জানায়, আমরা যারা কৃষক রয়েছি সকলের একটাই আশা—ফসলের ফলন বৃদ্ধি, সেই সাথে পরিবারের অন্য যোগান। অনেক সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফসল খারাপ হয়। ফলে আমাদের স্বপ্নও ধুলোসাৎ হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে এবার খুব সুন্দর ফলন হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরূপ সোনালি ধান সঠিকভাবে বাড়িতে তোলা যাবে।
হলদিয়ার আরেক কৃষক জানান, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এমনিতেই বোরো ধানে ফলন ভালো হয়। মাঝে মাঝে আবহাওয়ার জনিত কারণে বোরো ধানে পোকামাকড় বেড়ে যায়, এসব নিধনে সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে কেটে উঠতে পারলে আর কোনো বাধা থাকে না। পোকামাকড় তদারকিতে প্রয়োজনীয় সার-বিষ প্রয়োগ করতে হয়। তবে চলতি মাসে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছি আমরা।
উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় হাইব্রিড জাত ‘ময়না’, ‘অ্যারাইজ তেজ’, ‘টিয়া’র চাষাবাদ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে।
উফশী জাতের চাষাবাদ হয়েছে ৫,৯৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৫, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬২, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-৯৯, ব্রি ধান-১০০, ব্রি ধান-১০১, ব্রি ধান-১০২, ব্রি ধান-১০৪।স্থানীয় জাত ‘বিন্নি’ জাতের চাষাবাদ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে।
এদিকে উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম জানান, উখিয়া উপজেলার মধ্যে মোট ৬,৪৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। ফলনও ভালো হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের তদারকি করে যাচ্ছেন।
আফরোজা