ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

মাদারীপুরে বাজি ফাটানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ, এএসপিসহ অর্ধশত আহত

সুবল বিশ্বাস, নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

মাদারীপুরে বাজি ফাটানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ, এএসপিসহ অর্ধশত আহত

ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের রাজৈরে বাজি ফাটানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পরাপর দুই দিন দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘন্টা যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টাব্যাপী রাজৈর উপজেলা সদরের বেপারীপাড়া মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ১০/১২ টি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট তান্ডব চালানো হয়।

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাজি ফাটানোর সময় বাধা দেওয়া নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১২ এপ্রিল রাতে পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা দুই গ্রামের মধ্যে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ পুলিশসহ ২৫ জন আহত হয়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে দুই পক্ষের লোকজনকে ডাকলে মিমাংসার জন্য রাজি হয়। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০ টার সময় শালিস মিমাংসার জন্য বসার কথা ছিল। এরই মধ্যে রবিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে আবারো দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এসময় বদরপাশা গ্রামের লোকজন বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও দোকানের অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১২ টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে বদরপাশা গ্রামের বিক্ষুব্ধরা। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে রাজৈর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ঘটনাস্থালে র‍্যাব মোতায়েন করা হয়।

এ ঘটনায় মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য সহ উভয় পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মেহেদী মীর(২২), রাসেল শেখ(২৮), সাহাপাড়ার মনোতোষ সাহা(৫০), আলমদস্তারের তাওফিককে(৩৭) রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমের পায়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল থেকে অপারেশন করানো হয়। এছাড়া বাকি আহতরা রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

রাজৈর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ অতি সাহসীকতার সাথে সংঘর্ষ মোকাবেলা করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে ৪ ধাপে এই দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। কিন্তু সেই দায়ভার কাউকে দিতে চাই না। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান করতে পারব। আমরা চাই এই ঝামেলা থেকে তারা বের হয়ে আসুক।

উল্লেখ্য, ঈদ পরবর্তী সময় গত ২ এপ্রিল রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের ফুচকা ব্রিজ এলাকায় বাজি ফাটায় বদরপাশা গ্রামের আতিয়ার আকনের ছেলে জুনায়েদ আকন ও তার বন্ধুরা। এসময় ওই গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের ছেলে জোবায়ের খান ও তার বন্ধুরা মিলে তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে গত ৩ এপ্রিল সকালে রাজৈর বেপারিপাড়া মোড়ে জোবায়েরকে একা পেয়ে পিটিয়ে তার ডান পা ভেঙে দেয় জুনায়েদ ও তার লোকজন।

পরে আহত জোবায়েরের বড় ভাই অনিক খান (৩১) বাদি হয়ে জুনায়েতকে প্রধানসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে রাজৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসে ওঠে উভয় গ্রামের লোকজন।

একপর্যায়ে শনিবার ১২ এপ্রিল রাতে দুই গ্রাম পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কয়েকঘন্টা ব্যাপি এ সংঘর্ষ চলে। এসময় ব্যপক ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ঘন্টাব্যাপী প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে দুই ওসি ও অন্তত ১০ পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়।

মায়মুনা

×