ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

আইএমএফ এর শর্ত পূরণে রিজার্ভ বাড়াতে হবে ১ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৮, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

আইএমএফ এর শর্ত পূরণে রিজার্ভ বাড়াতে হবে ১ বিলিয়ন ডলার

ছবি : সংগৃহীত

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সাথে সম্পাদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত পূরণে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিট রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

 

 

আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ গণনার পদ্ধতিগত পার্থক্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের রিজার্ভ ধরা হয়েছে ২০.৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে নিট রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে মোট রিজার্ভ ২৬.১৫ বিলিয়ন ডলার দেখানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, "আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে কিছু খাত বাদ পড়ায় নিট রিজার্ভ কম দেখাচ্ছে। আমরা জুন নাগাদ এই লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হব।"

 

 

এই রিজার্ভ লক্ষ্য পূরণ না হলে আইএমএফের ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে বেগ পেতে হতে পারে। ইতিমধ্যে ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ঋণের তৃতীয় কিস্তির জন্য রিজার্ভ লক্ষ্য পূরণ জরুরি। অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর সতর্ক করে বলেছেন, "রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি সংকোচনের কোনো বিকল্প নেই।"

 

রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে:
* রপ্তানিকারকদের জন্য প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে
* রেমিট্যান্স আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে
* বিলাসবহুল পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে
* ডলারের বাজারে সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সক্রিয়

 

এই সংকটের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে:
- ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবমূল্যায়ন অব্যাহত
- আমদানি ব্যয় বেড়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি চাপ সৃষ্টি করছে
- বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে
- জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির চাপ তৈরি হয়েছে

 

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, জুনের মধ্যে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লে রিজার্ভ লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে বৈশ্বিক মন্দা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এই লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, "আইএমএফের সাথে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে কিছু শর্ত শিথিলের আবেদন করা হতে পারে।"

 

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, "রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। শুধু অস্থায়ী ব্যবস্থায় এই সংকট সমাধান হবে না।" তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণ, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য আনুষ্ঠানিক চ্যানেল শক্তিশালীকরণ এবং আমদানি সংকোচনের ওপর জোর দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আগামী কয়েক মাস হবে চ্যালেঞ্জিং। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বিত প্রচেষ্টাই কেবল এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আঁখি

×