
ছবিঃ সংগৃহীত
পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব হলো বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংলান, চাংক্রান ও পাতা। তিনদিনব্যাপী এই উৎসব পাহাড়ে বর্ণিলভাবে পালিত হয়ে থাকে। উৎসবের প্রথম দিনকে বলা হয় ‘ফুল বিঝু’, দ্বিতীয় দিনকে ‘মূল বিঝু’ এবং তৃতীয় দিনকে বলা হয় ‘গজ্জা পজ্জা’।
রোববার ছিল মূল বিঝুর দিন। বর্ষবরণের মূল বিজুর দিনকে ঘিরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাজন’ বা ‘পাঁচন’। বাঙালিরা এই খাবারকে বলে 'ঘ-’।
পাহাড়িদের কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যের এই রান্নার নাম সম্প্রদায়ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এর মধ্যে 'পাজন' শব্দটি মূলত চাকমারা ব্যবহার করেন। চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ বিঝুর দ্বিতীয় দিনে, অর্থাৎ রোববার, ঘরে ঘরে অতিথিদের পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন।
এছাড়াও প্রতিটি পাহাড়ি ঘরে বিভিন্ন ফলমূল, আচার, বিন্নি চালের তৈরি পিঠা এবং নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন থাকে। অনেকটা ঈদের মতো, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে দল বেঁধে এই পাজন খেতে যায় সবাই।
মূলত ৩০ থেকে ৪০ পদের সবজি দিয়ে তৈরি হয় এই বিশেষ সুস্বাদু খাবার ‘পাজন’। যার অধিকাংশই নদীর ধারে কিংবা বনে জন্মানো প্রাকৃতিক সবজি।
পাহাড়িরা বিশ্বাস করেন, সাতটি বাড়ি ঘুরে নানা ধরনের সবজিতে তৈরি পাজন খেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং নানা রোগব্যাধি দূরে থাকে। তাই এটি তাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় খাবার।
ফুলেন দেবী চাকমা বলেন, “৪০ পদের সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হলে এটি একটি ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবারে রূপ নেয়। আগে গ্রাম ও জুমের মানুষরা এই খাবার বেশি করে খেত। অনেক সবজি সব মৌসুমে পাওয়া যেত না, তাই সেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হতো। পরে সেগুলো অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে শরীরে শক্তি অর্জনের জন্য খাওয়া হতো। সেই শক্তি অর্জনের ধারণা থেকেই এসব সবজিকে ঔষধি মনে করা হতো। সেই প্রথা থেকে বিঝুতে আদিকাল থেকে পাজন খাওয়ার প্রচলন চলে আসছে।”
একসময় জুম চাষের সব সবজি মিশিয়ে রান্না করা হতো পাজন। বিশ্বাস করা হতো, পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকা যায়। তাই নতুন বছর শুরুর আগে, বছরের শেষ দিনে এই পাজন খাওয়া হয়—এমনটাই মনে করেন এ অঞ্চলের প্রবীণরা।
মারিয়া