
দেশের প্রাচীন ও ছোট মসজিদের সন্ধান মিলেছে বরিশালের বাকেরগঞ্জে। ছবি - জনকণ্ঠ
বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন সমুহের মধ্যে অন্যতম বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়নে সাহেবপুর গ্রামের এই মসজিদ। মসজিদটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক কোন ইতিহাস পাওয়া না গেলেও মসজিদটির গঠনশৈল ও নির্মানের উপাদান মুসলিম শাসন আমলে নির্মিত মসজিদ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১২০৪ সনে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয় থেকে মুসলিম শাসনের শুরু। সেই হিসেবে আজ মসজিদটির বয়স ৮ শ বছরেরও বেশি। আর ৮ শ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম ঐতিহ্য বহন করে আজো দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। এস্থানীয়দের মতে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ছোট মসজিদের মধ্যে এটি অন্যতম। আর এই মসজিদ ঘিরে প্রচলিত আছে নানা বিশ্বাস। মুসল্লিদের অনেকের দাবি, এটি একটি গায়েবি মসজিদ।
কেউ কেউ চেনেন একিনশাহ মাজার শরীফ হিসেবে। সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে রয়েছে কিছুটা ধোঁয়াশা। শত শত বছরের ছোট্ট মসজিদটি যেন এক বিস্ময়।
স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী, এ মসজিদের ভেতরে পাঁচজন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদটিতে মিম্বর না থাকলেও দেয়াল কেটে আকৃতি দেওয়া হয়েছে। মসজিদের ভেতরে উচ্চতা সাড়ে ১২ ফুট, দৈর্ঘ্যে ৮ ফুট এবং প্রস্থে ৫ ফুট। মসজিদটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছোট একটি জানালা। চার কনে চারটি পিলারের সাথে রয়েছে মসজিদটি। মসজিদটি জাফরি ইট ও চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত।
বিভিন্ন সময় মসজিদটিতে অনেক দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এসে নামাজ আদায় করেন। অনেকে এসে মসজিদের ভিতর আগরবাতি জ্বালিয়ে গাছের শিকড়ের সাথে পলিথিন ও সুতা দিয়ে বেঁধে দেয় তাদের মনের আশা পূরণের জন্য।
মসজিদটি নিয়ে অলৌকিক বিশ্বাসও প্রচলিত রয়েছে পুরো এলাকায়, যার মূল চরিত্রে বটসদৃশ একটি গাছ। পুরো মসজিদটি ঘিরে রেখেছে গাছটি। লতায় প্যাঁচানো গাছটি স্থানীয়ভাবে লাহর গাছ নামে পরিচিত। এর পাতার মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। সচরাচর এমনটি দেখা যায় না। গাছটি এমনভাবে মসজিদটিকে ঘিরে রেখেছে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এখানে কিছু আছে। মসজিদ, গাছ নিয়ে স্থানীয়দের আছে নানা বিশ্বাস, মতবাদ। কেউই এ মসজিদের সঙ্গে জুড়ে থাকা গাছের ডালা ভাঙা তো দূরে থাক, একটি পাতাও ভুলক্রমে ছেঁড়েন না। গাছ থেকে যে পাতা ঝড়ে পড়ে, তা পড়েই থাকে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারও করেন না কেউ।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, কেউ যদি এ গাছের ডাল ভাঙেন, কিংবা পাতা ছেঁড়েন, তবে তার বিপদ হবেই। গাছটি পুরোপুরিভাবে মসজিদকে ঘিরে রেখেছে। এ মসজিদ সাধারণ কোনো মানুষের সৃষ্টি নয়।
মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনার্থী কবি সাংবাদিক এস এম পলাশ বলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জের ইতিহাস সংরক্ষণে এই মসজিদটির কোন তথ্য নেই। তবে কে বা কারা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছে সেটাও কারো জানা নেই। বরিশালের প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে এই মসজিদটিও অন্যতম। তিনি আরো বলেন প্রাচীন এই মসজিদটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত। না হয় এই মসজিদটি এক সময় অবহেলা আর অযত্নে ধ্বংস হয়ে যাবে।
দেশের প্রাচীন ও ছোট এই মসজিদটি সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মসজিদটির বিষয় জানানো হবে। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হয়।
রাজু