ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশে বড় শোডাউন

ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি, বিভেদ ভুলে মাঠে নেতাকর্মীরা

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২৩:০০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি, বিভেদ ভুলে মাঠে নেতাকর্মীরা

.

ঢাকার পর সারাদেশের মধ্যে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট চট্টগ্রাম। বিশেষ করে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত সরকারের সময় আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামলা-মামলা ও নির্যাতনে দিনের পর দিন মহানগর বিএনপির শীর্ষ এবং তৃণমূল নেতারা ছিল ঘরছাড়া। ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা সেই বিএনপি ৫ আগস্টের পর বেশ ভালোভাবেই মাঠে সক্রিয়। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামে বিএনপির তিনটি ইউনিটই ঘুরে দাঁড়িয়েছে কয়েকগুণ শক্তিতে। দিন তারিখ ঠিক না হলেও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ, ইউনিট সভা এমনকি ঘরোয়া বৈঠকেও উপস্থিতি হচ্ছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে হেভিওয়েট নেতারা হাজির হচ্ছেন।
তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৭ বছর মামলা-হামলায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বাদ যায়নি। ফলে দীর্ঘদিন সরাসরি মাঠে সক্রিয় থাকতে পারেনি অনেকে নেতাকর্মী। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সবাই এখন মাঠে কয়েকগুণ শক্তিতে সরব। বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড এবং থানা-জেলা পর্যায়ে সক্রিয় নেতা এবং তাদের অনুসারীরা।
চট্টগ্রামের স্বার্থে এবং এলাকার সমস্যা সমাধানে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা ছুটছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, তার রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে বিপুল নেতাকর্মীর উপস্থিতির দেখা মিলছে। একই অবস্থা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের। তিনিও প্রতিদিন কোতোয়ালিসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাখার চেষ্টা করছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এ ছাড়া বর্তমান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমানও দল গুছিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের অভিজ্ঞতা ও দলীয় অবস্থানের ভালোই জানান দিচ্ছেন। ফলে নগরজুড়ে এখন বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই থাকছে বিএনপির কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান। অপরদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও হেভিওয়েট নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে থাকছেন। তার সভা-সমাবেশে হাজার হাজার কর্মী উপস্থিত হচ্ছেন। সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পুত্র ইসরাফিল খসরু রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনিও ছুটছেন ডবলমুরিং-বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায়। একই অবস্থা প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের পুত্রেরও। নোমানপুত্র সাঈদ আল নোমান তূর্যও সক্রিয় ডবলমুরিং-হালিশহরসহ নগর বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে সভা-সামাজিক অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতিতে নেতাকর্মীরাও  উজ্জীবিত। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে চষে বেড়াতে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারও। নগর ও উপজেলার স্ব স্ব এলাকায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রায় চার ডজন নেতা সক্রিয়, সঙ্গে তাদের হাজার হাজার কর্মী। অপরদিকে সীতাকু-ে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং এলাকায় এলাকায় জনসংযোগ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন দীর্ঘদিনের কারা নির্যাতিত নেতা বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের পুত্র মীর হেলাল নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম নগরীর একাংশ চান্দগাঁও এবং বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের বিএনপির প্রার্থী নিয়ে রীতিমতো আলোচনার ঝড় চলছে। চলছে শোডাউনের প্রতিযোগিতা। এবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান মাঠে তৎপর। মহানগর বিএনপির বড় একটি অংশের নেতৃত্ব দেওয়া এরশাদ উল্লাহ শহরের রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি এলাকায় সময় দিচ্ছেন।

একইভাবে আবু সুফিয়ান বোয়ালখালীর প্রতিটি ইউনিয়নে যাচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ফলে এ দুই নেতার হাজার হাজার অনুসারীরা সক্রিয় হয়ে পড়েছেন কর্মসূচি ও সভা-সমাবেশ নিয়ে। অপরদিকে পটিয়ার রাজনীতিতে এক সময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বিএনপির শাহজাহান জুয়েলের। এখন সেখানে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম তার বলয় নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে সক্রিয়। পৃথক বলয়ের কারণে পটিয়াজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শোডাউনে উজ্জীবিত হয়েছে সেখানের স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। আনোয়ারার সাবেক এমপি সরোয়ার জামান নিজামের বিশাল বলয় এখনো মাঠে সক্রিয়। তবে এবার সেখানে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন নির্বাচন করার আভাস দেওয়ার পর আনোয়ারার রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। ফলে দক্ষিণ ও উত্তর এবং মহানগর বিএনপির নেতারা জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করেই সভা-সমাবেশে নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে। ৫ আগস্টের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় হওয়ায় বড় শোডাউনে দলটির রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ মিলছে। ফলে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটির চট্টগ্রামের তিন ইউনিট।

প্যানেল

×