ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

বান্দরবানে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসব

ত্রিপুরাদের হারি বৈসু চাকমাদের মূল বিজু উদ্যাপন

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ত্রিপুরাদের হারি বৈসু চাকমাদের মূল বিজু উদ্যাপন

.

খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু। রীতি অনুযায়ী রবিবার সকালে দেবী গঙ্গার উদ্দেশে ফুল ও হাতে বোনা নতুন কাপড় ভাসিয়ে হারি বৈসু উদযাপন করে তারা। এর মধ্য দিয়ে পুরানো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি নেয় তারা। বৈসু উৎসব চলবে আগামী তিন দিন। অপর দিকে রবিবার চাকমা জনগোষ্ঠীর বিজু উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল। অর্থাৎ মূল বিজু। এই দিন ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। পরিবেশন করা হয় প্রায় শত রকমের সবজি দিয়ে তৈরি বিশেষ পাঁচন।
সারাদিন  চাকমাদের ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন ও ঘুরে বেড়ানো। মূল বিজুতে প্রধান আকর্ষণ থাকে পাঁচন তরকারি যা কমপক্ষে ৩২ প্রকার সবজি মিক্স করে রান্না করা হয়। অনেকে শতকের অধিক সবজি মিক্স করে রান্না করেন এই পাঁচন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মনে করে এটি যেহেতু বিভিন্ন প্রকার সবজি মিক্স করে রান্না করা সেহেতু এটি ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ একটি তরকারি। পাঁচন ছাড়া প্রতিটি ঘরে ঘরে থাকে নানান ধরনের খাবার আইটেম। এ দিনে সাধারণত কাউকে নিমন্ত্রণ করতে হয় না। যে কেউ যে কোনো ঘরে গিয়ে বিজু খেতে পারেন। অপরিচিত কেউ এলে তাকে সসম্মানে আপ্যায়ন করা হয়। পাহাড়ের বিজু এখন একটি সার্বজনীন উৎসব। এখানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালিরাও বেড়াতে যায় তাদের বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতে। এ দিন চলে শুধু অতিথি আপ্যায়ন ঘোরাফেরা আর আনন্দ উৎসব। সকালের দিকে চলে রান্নাবান্নার কাজ। রান্না শেষ করে অপেক্ষায় থাকেন কখন অতিথি আসবেন।
চৈত্রের ভোরের প্রথম আলোয় দেবী গঙ্গার উদ্দেশে ফুল ভাসানোর জন্য জড়ো হয় ত্রিপুরা নারীরা। রবিবার সকালে খাগড়াছড়ির খাগড়াপুর এলাকায় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনা-রিসাই পরে অংশ নেয় এই উৎসবে। বন থেকে সংগ্রহ করা মাধবীলতা, অলকানন্দ, জবাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে পুরাতন বছরের দুঃখ গ্লানি মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে দেবী গঙ্গার উদ্দেশে পূজা করেন তারা। এ সময় নিজেদের হাতে বোনা ছোট্ট কাপড় ভাসানো হয় জলে। ত্রিপুরা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। ফুল ভাসানোর ওই উৎসবের অংশ নিতে পেরে খুশি ত্রিপুরা নারীরা।
হারি বৈসুতে অংশ নেওয়া রীতি ত্রিপুরা ও তুলিকা ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা খুব সকালে ফুল সংগ্রহ করি। পরে সেই ফুল আমরা নদীতে এসে ভাসিয়ে দিই। এসময় জলে গঙ্গা দেবীর পূজা করি। এখানে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। কারণ বছরে একবার মাত্র এই  ধরনের উৎসব হয়।’
উৎসবে অংশ নেওয়া গায়ত্রী ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। অনেক বছর পর আমি এ ধরনের উৎসবে অংশ নিয়েছি। খুবই ভালো লাগছে হারি বৈসু’র এই উৎসবে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে। নতুন বছর বরণে হারি বৈসু, বৈসুমা, বিসিকাতাল তিন দিন পৃথক আয়োজন করে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। হারি বৈসুতে তারা জলে ফুল ও নতুন কাপড় ভাসায়। এ ছাড়া বৈসুমাতে ঘরে ঘরে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। বিসিকাতালের দিন নতুন বছরকে বরণ করা হয়।
মারমা ঐক্য পরিষদের সাংগ্রাই উৎসব ॥ মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবে বর্ষ বিদায় ও বরণ ঘিরে বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা রঙ্গীন হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি। রবিবার সকালে  খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে মারমা ঐক্য পরিষদের আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া।
বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব শুরু ॥ বর্ণিল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর নিজেদের ঐতিহ্যগত পোশাকে ফুটে উঠেছে পাহাড়ের মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসব। বান্দরবান জেলায় বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ উৎসব। প্রাণবন্ত এই উৎসবে ফুটে উঠেছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির বার্তা। রবিবার সকাল ৮টায় জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি।
এ সময় তিনি বলেন, পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরা উৎসাহ-উদ্দীপনায় একযোগে কাজ করছি। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি।
বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খিয়াং, খুমি, বমসহ ১১টি জাতিগোষ্ঠী ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, হাতে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। আনন্দ শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।
রাঙ্গামাটিতে মূল বিজুর পাঁচন উৎসব ॥ পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংগ্রাই, সাংলান, চাংক্রান ও পাতা। তিন দিনত্রিপুরাদের হারি বৈসু চাকমাদের
মূল বিজু উদ্যাপন

প্যানেল

×