
ছবি: জনকণ্ঠ
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও, ১৪টি খালের নৌপথ কচুরিপনায় বন্ধ হয়ে পড়ায় শত শত কৃষক ধান কেটে বাড়িতে আনতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিকল্প পথে ধান আনতে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। কচুরিপনা অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে রোববার (১৩ এপ্রিল) ভুক্তভোগী কৃষকেরা লিখিত আবেদন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে সোনালি পাকা ধান। চলতি বোরো মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। তবে ধান ঘরে তোলার সময় প্রতিদিন আকাশে মেঘ জমছে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও গরমে ছন্দপতন ঘটছে। ফলে ধান নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কৃষকরা জানান, “ধান ভালো হয়েছে, কিন্তু ধান ঘরে তোলার সময় বৃষ্টি হলে পাকা ধানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। খালগুলো কচুরিপানায় বন্ধ থাকায় ধান কেটে বাড়ি আনতে পারছি না। আমরা মহাবিপাকে পড়েছি। এগুলো শীঘ্র পরিষ্কার করা দরকার।”
তাঁদের ভাষায়, প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় ধান কাটতে হচ্ছে। অপরদিকে কচুরিপনায় নৌপথ বন্ধ থাকায় দিশেহারা তারা। সড়ক পথে ধান আনতে মজুরি তিন-চার গুণ বেশি। অনেক এলাকায় মেঠোপথ না থাকায় ধান আনাও দুষ্কর। তাই কৃষকেরা নৌপথেই নির্ভরশীল। কিন্তু বাঁশতলা, গাবতলা, ডোবাখালী, ঝালডাঙ্গা, নারায়ণ খালীসহ ১৪টি খাল কচুরিপানা ও স্লুইসগেটের কারণে বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
রায়গ্রাম এলাকার কৃষক নূর মোহাম্মদ শেখ, দীনেশ রায়, বিকাশ হালদার বলেন, “ধান পেকে গেলেও কচুরিপনার কারণে নৌকা দিয়ে আনতে পারছি না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি নামলে বড় ক্ষতি হবে। আমাদের মেম্বার মোস্তফা তালুকদার বাঁশতলা খালের কিছু অংশ পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু এখনও চার কিলোমিটার খাল কচুরিপনায় আটকে আছে।”
নূর মোহাম্মদ শেখ বলেন, “এই খালে কয়েক’শ নৌকা কচুরিপনায় আটকে আছে। পাকা ধান কেটে ওই নৌকায় করে আনাই সহজ ছিল। এখন তো তা হচ্ছে না। এই ধান মাঠে নষ্ট হলে আর বাঁচবো না।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা তালুকদার বলেন, “কৃষকেরা যাতে ধান ঘরে তুলতে পারে, সে কারণে কিছুটা অংশ জনবল দিয়ে পরিষ্কার করেছি। একটি স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্র দিয়ে দ্রুত কচুরিপনা অপসারণের চেষ্টা চলছে। তবে আর্থিক সংকটে পুরো খাল পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। তাই সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন।”
চিতলমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন জানান, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাঁশতলা, গাবতলা, ডোবাখালী, ঝালডাঙ্গা, নারায়ণ খালীসহ কয়েকটি খালের কচুরিপনা অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনে আবেদন করা হয়েছে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সিফাত আল মারুফ বলেন, “অতীতে স্লুইসগেট দিয়ে লবণ পানি দিয়ে কচুরিপনা মারা হতো, তবে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকত। এবার কৃষকেরা লবণ পানি ব্যবহার না করায় লাভবান হয়েছেন। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি। এবার ১২,১২৩ হেক্টর জমিতে ধান হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল বলেন, “চিতলমারীতে ধান, সবজি ও মাছের উৎপাদন হয়। ধান যেন কৃষকরা ঝড়বৃষ্টির আগে ঘরে তুলতে পারেন, সেই জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কচুরিপনা অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
শহীদ