ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

কলেজছাত্রী হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২০:৪০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

কলেজছাত্রী হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল কক্সবাজার

কক্সবাজার : মেধাবী কলেজছাত্রী মোশারফা সুলতানা লাকি হত্যার প্রতিবাদে সহপাঠীদের মানববন্ধন

কক্সবাজার সদর খরুলিয়ার মেধাবী কলেজ ছাত্রী মোশারফা সুলতানা লাকি হত্যার পর পুরো এলাকা এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনতার ভাষ্য, এই মৃত্যু কোনো আত্মহত্যা নয়, এটি ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। অথচ পুলিশ তা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে হয়রানি করছে। আর আসামিকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খরুলিয়া বাজারে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু“ করে সাধারণ মানুষ, অভিভাবক সবাই রাস্তায় নেমে আসেন।
খুনির বিচার চাই, ঘুষখোর পুলিশ হটাও! ঘুষ খেয়ে খুনি বাঁচায়, থানা যেন খুনির মঞ্চ সাজায়, লাশ ঝুলেছে, পুলিশ হাসে এই বিচার কবরের পাশে।
ঘুষখোর পুলিশ হটাও, লাকির হত্যার বিচার চাই, অভিযুক্তকে বাঁচাতে থানা হয়েছে দুর্নীতির আখড়া এমনসব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাজার এলাকা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীর চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠেছিল ক্ষোভে। সে চিৎকার করে বলে, আমরা পুলিশের কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলাম, আর তারা আমাদেরই ভয় দেখায়। ওদের কাজ খুনিকে বাঁচানো, আমাদের নয়। ঘুষ খেয়ে খুনি বাঁচানো থানা চাই না আমরা। একজন স্থানীয় সমাজকর্মী সরাসরি বলেন, এটা আত্মহত্যা নয়, এটা একটা ঠাণ্ডা মাথায় করা খুন। পুলিশ এই খুনিদের আড়াল করছে। আর আমরা চুপ করে থাকব না। এবার যদি বিচার না হয়, তাহলে থানা ঘেরাও করব, মাঠে নামব।
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, মেয়ে মরেছে, অথচ খুনি মুক্ত। মামলার জন্য গেলেই পুলিশ বলে ‘তদন্ত চলছে’। এ কেমন তদন্ত? নাটক না বানিয়ে খুনিকে ধরো! মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এক শিক্ষার্থী কেঁদে কেঁদে বলেন, আমরা প্রতিদিন একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। আজ ও’নেই, আর আমরা জানি কেন নেই। কিন্তু পুলিশ কিছুই করছে না। আমাদের কথা যদি না শোনা হয়, আমরা নিজেরাই বিচার আদায় করব।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন, লাকি শুধু একজন ছাত্রী নয়, সে ছিল সম্ভাবনার প্রতীক। আজ তাকে হত্যা করা হয়েছে, আর পুলিশ প্রহসনের নাটক করছে। আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাই এখনই।
এদিকে, প্রতিবাদকারীদের একাংশ ঘোষণা দিয়েছেন, পুলিশ যদি অবিলম্বে ওসমান গনিকে গ্রেফতার না করে, তাহলে আমরা সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাব। আমরা জানি, লাকির মতো মেয়েরা শুধু আত্মহত্যা করে না তাদের মেরে ফেলা হয়, আর তারপর পুলিশ সেটাকে আত্মহত্যা সাজায়!
নিহতের পরিবার জানায়, সৌদি প্রবাসী জাফর আলমের ছেলে ওসমান গনি বাবু (২৫) লাকির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পরে গোপনে বিয়েও করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। ধারণা করা হচ্ছে, লাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন যা হয়ত এই নির্মম হত্যার পেছনে অন্যতম কারণ। এ ঘটনায় এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। মামলাও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বরং থানার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ গ্রহণের স্পষ্ট অভিযোগ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরিবর্তে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জনতা। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জনতা বলেন, খরুলিয়ায় শুধুই কান্না নয় এখন সেখানে ক্ষোভ, ঘৃণা আর প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে। লাকির মৃত্যু শুধু তার পরিবারের নয়, এটি পুরো সমাজের একটি ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তবে মানুষ জেগেছে এবং এবার তারা চুপ থাকবে না।
তাদের দাবি অবিলম্বে ওসমান গনিকে গ্রেপ্তার এবং লাকির পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, আজ যদি লাকির বিচার না হয়, তাহলে কাল আরেকটা লাকি মরবে। আর পুলিশের নাটক চলতেই থাকবে। 

×