
চিকিৎসকদের ওপর হামলা, মারধর, হুমকি-ধমকির প্রতিবাদে ও ৬ দফা দাবিতে ভোলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা ঘণ্টাব্যাপী ধর্মঘট পালন করছেন। রবিবার সকাল থেকে তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে তার অফিস রুমে অবরুদ্ধ করে কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে স্টাফরা। এ সময় হাসপাতালের আবাসিক ও বহির্বিভাগের রোগীদের কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এদিকে কোনো ঘোষণা ছাড়াই হাসপাতালে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।
স্থানীয়রা প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মো. মাকসুদুর রহমান (৪২) নামে এক রোগীর বুকে ব্যথা নিয়ে স্বজনরা জুমার নামাজের সময় সোয়া একটার দিকে ভোলার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু ডাক্তার কাগজে লিখে রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। আর চিকিৎসকের দেরিতে আসা ও অবহেলার কারণেই এর মৃত্যু হয়েছে বলে এমন অভিযোগ তুলে চিকিৎসক নাঈমুল হাসনাতকে মারধর করা হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পরদিন ১২ এপ্রিল শনিবার রাত ৮টায় ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবুল হকের স্ত্রী আলেফা খাতুন (৮৫) বার্ধক্যজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯টায় রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয়-স্বজন উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসককে মারতে যায়। হাসপাতালের কর্মচারীরা বিপদের আশঙ্কা দেখে চিকিৎককে পেছন দরজা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে রোগীর স্বজনদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করালেও তারা চিকিৎসকদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। শনিবার রাতে রোগীর স্বজনরা চলে গেলেও রবিবার সকালে আবারও ওই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে খুঁজতে আসে। এরপরেই চিকিৎসক ও হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও নিরাপত্তাসহ ৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ডাকে। একই সঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে তার রুমে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকালে পুলিশ প্রহরায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চললেও আবাসাসিক ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিল। সকালে কোনো চিকিৎসক রাউন্ড দেয়নি বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসংখ্য রোগীকে সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব রোগী চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মু. মনিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের অচল অবস্থা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তায়েবুর রহমান জানান, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় তারা রবিবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার আশ্বাস্ত করায় তাদের ধর্মঘট ২টায় প্রত্যাহার করে হাসপাতালের সকল ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভোলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক ডা. শেখ আবু সুফিয়ান রুস্তম দুপুরে জানান, চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফদের ৬ দফা দাবি দিয়েছিল। তা স্থানীয় প্রশাসন ডিসি, এসপিসহ ডিজিতে কথা বলে তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। তাদের ধর্মঘট আপাতত প্রত্যাহার করেছে।