
ছবিঃ সংগৃহীত
চিকিৎসকদের ওপর হামলা, মারধর , হুমকি ধামকির প্রতিবাদে ও ৬ দফা দাবীতে ভোলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী ধর্মঘট পালন করছেন। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকে তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে তার অফিস রুমে অবরুদ্ধ করে কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে স্টাফরা। এ সময় হাসপাতালের আবাসিক ও বহিঃবিভাগের রোগীদের কোনো চিকিৎসা দেয়নি। এদিকে কোন ঘোষণা ছাড়াই হাসপাতালে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে জরুরী বিভাগ চলছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নোমো. মাকসুদুর রহমান (৪২) নামে এক রোগীর বুকে ব্যাথা নিয়ে স্বজনরা জুম্মার নামাজের সময় সোয়া একটার দিকে ভোলার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানকার ডাক্তার কাগজে লিখে রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। তবে চিকিৎসকের দেরিতে আসা ও অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে চিকিৎসক নাঈমুল হাসনাতকে মারধর করা হয়।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পর দিন ১২ এপ্রিল শনিবার রাত ৮ টায় ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মুজিবুল হকের স্ত্রী আলেফা খাতুন (৮৫) বার্ধক্যজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯টায় রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয়-স্বজন উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসককে মারতে যায়। হাসপাতালের কর্মচারীরা বিপদের আশঙ্কা দেখে চিকিৎককে পেছন দরজা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে রোগীর স্বজনদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করালেও তাঁরা চিকিৎসকদের প্রাণ নাশের হুমকী দেয়।
শনিবার রাতে রোগীর স্বজনরা চলে গেলেও রবিবার সকালেও আবারও ওই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে খুঁজতে আসে। এরপরেই চিকিৎসক ও হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও নিরাপত্তাসহ ৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ডাকে। একই সাথে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে তার রুমে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এসময় আন্দোলনকারীরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো ডা. নাইমুল হাসনাত কে ভুল চিকিৎসার অজুহাতে নির্যাতনকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে, ডিউটিরত চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, সরাসরি ও সোস্যাল মিডিয়ায় যারা চিকিৎসকদের নির্যাতনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে, পর্যাপ্ত চিকিৎসক পদায়ন দিয়ে চলমান চিকিৎসক সংকট সমাধান করতে হবে,হাসপাতাল চত্ত্বরে জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে ও দালাল মুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকালে পুলিশ প্রহরায় জরুরী বিভাগের কার্যক্রম চললেও আবাসিক ও বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিলো। সকালে কোনো চিকিৎসক রাউন্ড দেয়নি বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসংখ্য রোগীকে সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দূর দূরান্ত থেকে আসা এসব রোগী চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা: মু. মনিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের অচল অবস্থা দূর করতে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করছেন। ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তায়েবুর রহমান জানান, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় তারা রবিবার সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। তাদের দাবি গুলো বাস্তবায়ন করার আশ্বাস্ত করায় তাদের ধর্মঘট ২ টায় প্রত্যাহার করে হাসপাতালের সকল ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভোলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক ডা. শেখ আবু সুফিয়ান রুস্তম দুপুরে জানান, চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফদের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলো। তা স্থানীয় প্রশাসন ডিসি, এসপিসহ ডিজিতে কথা বলে তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। তাদের ধর্মঘট আপাতত প্রত্যাহার করেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, ভোলা সদর হাসপাতালে ৬০জন চিকিৎসকের মধ্যে পদায়ন আছে মাত্র ২০জন। ৩০জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে আছে মাত্র ৪জন। ৯৬জন স্টাফ নার্সের মধ্যে আছে ৩০জন। এই বিশাল শূণ্যতার মধ্যে ২৫০শয্যার হাসপাতাল চলছে।
রিফাত