
ছবি: জনকণ্ঠ
পহেলা বৈশাখ মানেই রঙিন উৎসব, নতুন কাগজে পুরোনো দিনপঞ্জি মুছে ফেলে নতুন সূচনার আনন্দ। আর এই আনন্দকে আরও রঙিন করে তোলে গ্রামীণ হস্তশিল্প, মাটির খেলনা আর ঘর সাজানোর বাহারি পণ্য।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার পাচুরিয়া, উড়াকান্দা, দাড়শী, গোয়ালন্দ উপজেলার কাঁটাখালী, বরাটসহ বিভিন্ন পাল বাড়িতে এখন দিন-রাত চলছে প্রস্তুতির কাজ। তবে এই প্রস্তুতির এক অনন্য দিক হলো—শিল্পের মূল কারিগরদের মধ্যে রয়েছে বহু শিশু।
যে বয়সে হাতে রংতুলি থাকা মানে ছবিতে সাদা ক্যানভাস রাঙানো, সেই বয়সেই তারা পরিবারের পাশে বসে তৈরি করছে বৈশাখের ঘোড়া, হাতি, রঙিন খেলনা, আর নানা ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী। কেউ কেউ রং তুলিতে দিচ্ছে নিখুঁত ছোঁয়া, কেউ তৈরি করছে কাঠামো, কেউ বা রোদে শুকাচ্ছে কাঁচা মাটির জিনিসপত্র।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব এক পাল কারিগর জানান, "পহেলা বৈশাখ আমাদের বছরের সবচেয়ে বড় মৌসুম। এখন সবাই মিলে কাজ করি। ছেলেমেয়েরাও আগ্রহ নিয়ে শিখছে। কাজ করতে করতে ওরাও রীতিমতো শিল্পী হয়ে উঠেছে।"
এদিকে একাধিক নারী-পুরুষ বলেন, আগের মতো ব্যস্ততা নেই। আগের মতো মাটির পণ্যের মূল্য নেই। প্লাস্টিক দখল করেছে মাটির পণ্যের বাজার। তারা বলেন, সারা বছর তেমন চাহিদা থাকে না। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কিছু কাজের অর্ডার পাওয়া যায়। তখন পরিবারের সবাই মিলে-মিশে কাজ করি। সারা বছর বিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে তারা আরও বলেন, মাটির তৈরি এই পেশাকে বাঁচাতে হলে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে এবং নতুন বাজার তৈরি হলে এই পেশার উন্নয়ন সম্ভব।
শিশুদের এই অংশগ্রহণ যেমন দেখায় পারিবারিক ঐতিহ্যের চর্চা, তেমনি প্রশ্ন তোলে—শিশুরা কি পাচ্ছে তাদের বেড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় সময় ও স্বাধীনতা? অনেকেই বলছেন, কাজ শেখা মন্দ নয়, কিন্তু সেটি যেন হয় আনন্দ ও শিক্ষার অংশ হিসেবে, শ্রমের বোঝা হিসেবে নয়।
রাজবাড়ীর এসব পাল বাড়িতে কাজের সঙ্গে যুক্ত এক শিক্ষার্থী বলে, “স্কুল থেকে ফিরে একটু সময় কাজ করি, ভালোই লাগে। মা-বাবা পাশে থাকেন, তাই ভয়ও লাগে না।” তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুশ্রম আর পারিবারিক সহায়তার মাঝের সীমারেখা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে সরকারি তদারকি ও সচেতনতা আরও বাড়ানো উচিত।
শহীদ