ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

নদীতে তীব্র ভাঙ্গনে ৫ কিলোমিটার এলাকা হুমকিতে

কামাল হোসেন খান, মতলব উত্তর, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

নদীতে তীব্র ভাঙ্গনে ৫ কিলোমিটার এলাকা হুমকিতে

ছবিঃ সংগৃহীত

মেঘনা-ধনাগোদা নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন চলছে। এর প্রভাবে ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, কালিপুর থেকে কালির বাজার পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তীব্র ভাঙ্গনে ৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ হুমকির মুখে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ধনাগোদা নদীর প্রবেশমুখের চরকালিপুরা ও ষোলআনী এলাকা মুন্সিগঞ্জে বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। বালি উত্তোলনের ইজারা মুন্সিগঞ্জ জেলায় দেওয়া হলেও উত্তোলনকারীরা চলে আসে মতলবের নদীতীরবর্তী এলাকায়। ইজারাদাররা ইজারা নিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ জেলায়, কিন্তু বেশিরভাগ সময় বালি উত্তোলন করেন চাঁদপুর জেলায়।

ধনাগোদা নদী অঞ্চলে অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চার মাসে চারটি অভিযানে ১৭টি ড্রেজার, ১১টি বাল্কহেড, ২টি স্পিডবোট, ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়। এটি প্রমাণ করে এই নদীতে ব্যাপক হারে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অবৈধ বালি কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

বালি উত্তোলন মতলবের সীমানা ঘেঁষা হওয়ায় ষাটনল, কালিপুর, বেলতলীসহ বেশ কিছু অঞ্চলে নদীভাঙ্গন আরও বেশি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ষাটনল ও কালিপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর মোহনার ষাটনল থেকে কালির বাজার পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ কিলোমিটার এলাকা হুমকির মুখে। ভাঙ্গনের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন জানান, এই এলাকায় নদীর আচমকা ভাঙ্গনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বসতি, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালিপুর সপ্রাবি, কালিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েজ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতালসহ এই অঞ্চলের মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বালি মহলের নামে ইজারা দেওয়া মতলবের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ ও আতঙ্কের। মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধটিও ঝুঁকিতে রয়েছে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সেলিম শাহেদ বলেন, ধনাগোদা নদীর কালিপুর, খাগুরিয়া, হাপানিয়া, নবীপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হবে।

মারিয়া

×