ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

৫০০ বছরের চড়ক পূজা! চাটমোহরের গ্রামে ভক্তদের ঢল

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাটমোহর, পাবনা 

প্রকাশিত: ১৮:১২, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

৫০০ বছরের চড়ক পূজা! চাটমোহরের গ্রামে ভক্তদের ঢল

ছবি: জনকণ্ঠ

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামে উপমহাদেশের বিখ্যাত মহাদেব ও চড়ক পূজা সহ তিনদিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে চড়ক গাছ উত্তোলন ও প্রতিমা আসনে প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়, যা চলবে আগামী তিনদিন।

এই ঐতিহাসিক চড়ক পূজা ও মেলায় বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু হিন্দু ভক্তের সমাগম ঘটে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন থেকে বড়াল নদের তীরে অবস্থিত বোঁথর গ্রামটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধারণা করা হয়, সিন্ধু সভ্যতা থেকে এই পূজা ও মেলার প্রচলন হয়ে আসছে। আবার অনেকের মতে, এর সূচনা বান রাজার আমলে।

অনুমান করা হয়, প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই পূজা ও মেলা পালিত হয়ে আসছে। মূলত চৈত্রের ২২ তারিখে সন্ধ্যায় পাঠ ঠাকুরের পাটে ধূপ দেওয়ার মাধ্যমে পূজার প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বোঁথর শিবমন্দির থেকে পাঠ ঠাকুর গৃহে গৃহে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ ও ২৭ চৈত্র ফুল ভাঙা ও কালী নাচের আয়োজন হয়, এরপর প্রতিমা আসনে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

চৈত্র মাসের শেষ দিন এবং বৈশাখের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন হয় মূল চড়ক মেলা। আগে মাসব্যাপী মেলা চললেও বর্তমানে তা তিনদিনেই সীমাবদ্ধ। চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় (সরকারি পঞ্জিকা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ) আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩ হাত লম্বা চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। এর আগে পূজারীরা ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে চড়ক গাছে পূজা দেন এবং মহাদেব মন্দিরের চালে বাতাসা ছিটান মঙ্গলার্থে।

চড়ক পূজা উপলক্ষে ২৮ চৈত্র মহাদেবের আসনে প্রতিমা তোলা হয়, যা ৭ বৈশাখ নামানো হয়। এ পূজায় ১৩ জন প্রধান ব্রতধারীকে ৬ দিন উপবাসে থাকতে হয়।

বোঁথর মহাদেব মন্দির ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, "পূজা উপলক্ষে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত মেলায় অংশ নিচ্ছেন। মনের বাসনা পূরণে অনেকে মানত করেন, কেউ পাঁঠাবলি দেন, কেউ কবুতর উৎসর্গ করেন, আবার কেউ পূজার অর্ঘ্য সাজানো চালুন দেন।"

চাটমোহর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, সহকারী অধ্যাপক অশোক চক্রবর্তী বলেন, "চাটমোহর পৌর শহর সংলগ্ন বড়াল নদের উত্তর পাড়ের আদর্শ গ্রাম বোঁথর। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রামটি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। দেশ-বিদেশ থেকে আত্মীয়স্বজন মেলায় আসেন। এক সময় চলনবিল অঞ্চলের সকল নতুন-পুরাতন জামাইকে এই মেলায় আনতে হতো। হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলায় পরিণত হতো এই আয়োজন। এখনো পাঁচশত বছরের বোঁথর চড়ক পূজা ও মেলার আনুষ্ঠানিকতা অক্ষুণ্ণ আছে, শুধু কমে গেছে মেলার জৌলুস।"

শহীদ

×