ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

নালিতাবাড়ীর খরস্রোতা চেল্লাখালী নদী এখন বোরো ফসলের মাঠ

এম. সুরুজ্জামান, সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

নালিতাবাড়ীর খরস্রোতা চেল্লাখালী নদী এখন বোরো ফসলের মাঠ

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ভারত থেকে বয়ে আসা খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীটি নাব্যতা হারিয়ে এখন অনেকটাই মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে থাকে খরস্রোত। শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে মরা খালে পরিণত হয়। আর শুকনো মৌসুমেই স্থানীয় কৃষকরা এর বুক চিরে আবাদ করেন বোরো ফসল। নদীর বুকে পলি মাটি থাকায় বোরো আবাদও খুব সুন্দর হয়।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমেও এই নদীতে পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে তীরবর্তী কয়েক শত বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গৃহহীন করে দিয়েছিল। এদের অনেকেই বসতবাড়ি পুনরায় নির্মাণ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমান শুকনো মৌসুমে নীরব নিথর যৌবন হারানো এই চেল্লাখালী নদীর বুকে বোরো ধান চাষ হচ্ছে। এখন সবুজে সবুজে ভরে গেছে নদীর বুক। হাইব্রিড আগাম জাতের ধান রোপণ করায় আর অল্প কিছু দিন পরেই কৃষকরা তাদের সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। আর দিন দিন এই নদীতে বোরো আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে এক দুই মাস এই নদীতে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে শুকিয়ে যায়। তখন প্রান্তিক কৃষকরা বোরো আবাদের জন্য জায়গা প্রস্তুত করে। এই নদীর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের অংশে বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি, আন্ধারুপাড়া, বাতকুচি ও পলাশীকুড়া এলাকায় নদীর চরে চলতি বোরো মৌসুমে ১০-১৫ জন প্রান্তিক কৃষক প্রায় ১০/১২ একরের মতো জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এতে বাম্পার ফলনে অধিক লাভের স্বপ্ন বুনছেন নদী তীরবর্তী কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমের শুরুতেই তারা বীজতলা তৈরি করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রোপণ করেছেন। ইতোমধ্যে রোপণকৃত ধান নদীর বুকে সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করেছে। কিছু অংশে ধান বের হয়ে পাকতে শুরু করেছে। তারা আরো জানান, নদীর বুকের জমিতে আবাদ করা অনেক সহজ। এতে সেচ দিতে হয় না। এমনকি পলি মাটি পড়ায় সার-বিষ তেমন লাগে না। এজন্য বাড়তি কোন খরচ নেই বললেই চলে।

উপজেলার বাতকুচি গ্রামের কৃষক আয়নাল হক (৪৮) বলেন, এ বছর নদীর চরে ১০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। নদীর বুকে বোরো ধান উৎপাদন করতে সেচের প্রয়োজন হয় না। নদীতে পলি মাটি পড়ায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি পাহাড়ি ঢল আসার আগেই ফসল ঘরে তুলতে পারবো।

আন্ধারুপাড়া এলাকার কৃষক মোজাফফর আলী (৪৫) বলেন, নদীর বুকে জমিগুলো সমান্তরাল নয়। তাই আলাদা ছোট ছোট প্লটে জমি প্রস্তুত করে বোরো চাষ করেছি। নদীর বুকে প্রতি বিঘা জমি থেকে ২০-২৫ মণ ধানের উৎপাদন হয়। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রতি বছরই উপজেলার চেল্লাখালী নদীতে পানি কমে গেলে নদীর চরে এলাকার কৃষকরা বোরো ধান রোপণ করে থাকেন। নদীর বুকের জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন এটি বাড়তি খাদ্যের জোগান হিসেবে যোগ হয়। তাই এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

ফারুক

আরো পড়ুন  

×