ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

গ্রামীণ বলি খেলা! 

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ১২ এপ্রিল ২০২৫

গ্রামীণ বলি খেলা! 

১২ এপ্রিল-দিন দুপুরের প্রখর রোদ  উপেক্ষা করে খেলার টানে ছুটে আসে শত-শহস্র মানুষ। মাঠ-ঘাট, ছড়া, খাল-বিল মাড়িয়ে এসে অনেকে উঠে গাছের ডালে,অনেকে উঠে বিল্ডিং এর ছাদে,সবার লক্ষ্য বলীখেলা দেখার। ১২ এপ্রিল শনিবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ফকিরাচাঁন বিলে অনুষ্ঠিত বলী খেলায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।

বলিখেলার এই আসরে ফটিকছড়ি পৌরসভার মাসুদ বলী পাইন্দং ইউনিয়নের ফকিরাচাঁন এলাকার জিয়া বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। খেলায় লড়ার জন্য মোট ৪০ জন বলী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৮ জন বিজয়ী হন। বাকীরা যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হন। অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ বছরের বৃদ্ধ যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন ১৭ বছরের তরুণ বলীও।

প্রথম পর্বের খেলা তিনটা থেকে শুরু হয়ে চলে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় চুড়ান্ত পর্ব।চুড়ান্ড পর্বে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পৌরসভার মাসুদ বলী খেলার মাঠে আসলে সবাই করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এসময় আয়োজক কমিটির মধ্যে বিরোধে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। পরে কমিটির সিদ্ধান্তে মাঠে উঠে মুখোমুখি হন জিয়া বলীর। মুহুর্তেই তাকে পরাজিত করে শিরোপা হাতে তুলে নেন মাসুদ। খেলা শুরুর আগে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্ধী তুলনা করে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন। এসময় মাসুদ দর্শকদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।বিজয়ী মাসুদ বলী বলেন, ‘আমি চেষ্ঠা করি প্রতিনিয়ত খেলতে। এলাকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করি। জয়ী হতে পেরে আনন্দিত। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে বলী খেলায় তার ডাক পড়ে। অনেক দুরেও যাই। খেলা শেষে সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এসময় স্থানীয় মেম্বার মো. নুর মিয়া, মো. বেলাল সাওদাগর, মো. আবুল বশর, মো. নেজাম উদ্দিন চৌধুরী, মো. আব্দুল আজিজ, মো. এরশাদ উল্লাহ, মো. ইয়াকুব আলী, মো. ইদ্রিছ, মো. মান্নান, মো. মনচুর, মো. হানিফ, মো. জিয়া, ডাক্তার মো. রুবেল, মো. একরাম, মো. আবু জাফর, মো. ফজল বারেক, মো. ইরফান, মো. আকিব উদ্দিন, মো. মিজান উদ্দিন ও মো. সোলেমান উপস্থিত ছিলেন। 

স্থানীয় দেশ ও প্রবাসীদের অর্থায়নে ঐতিহ্যবাহী এই বলী খেলার আয়োজন করা হয়।খেলায় বাদ্যযন্ত্রের তাল, বলীদের খেলায় অংশ গ্রহণ এবং বিভিন্ন ছোট-বড় বলীর নৃত্য ছিল বাড়তি আকর্ষণ। উপজেলার ভুজপুর থেকে সন্তান নিয়ে বলীখেলা দেখতে আসেন স্কুল শিক্ষক রণজিত দাশ। তিনি বলেন, এই বলী খেলা চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে রক্ষা করে। হারিয়ে যাওয়া খেলার আসরটি প্রতিবছর হলে গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম এটি দেখার সুযোগ পাবে। খেলার অন্যতম আয়োজক মো. রিপন আলী বলেন, আমরা চেস্টা করব এই বলী খেলা প্রতিবছর চলমান রাখতে। খেলাটি গ্রাম বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা দেশী ও প্রবাসীরা চেষ্টা করেছি দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় এতদাঞ্চলের লোকজনকে উৎসাহী করতে।
 

রাজু

×