
ছবি: জনকণ্ঠ
একটি সমাজ তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন সবাই সেখানে সমানভাবে জায়গা পায়—বয়স, সক্ষমতা কিংবা পরিচয়ের বেড়াজাল ছাড়িয়ে।
ঠিক এমন একটি মানবিক ভাবনা ছুঁয়ে গেল লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আয়োজিত এক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মশালা। আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) রায়পুর প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
“প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিকরণে সুশীল সমাজের ভূমিকা” শীর্ষক এই কর্মশালায় ছিল না কেবল বক্তৃতা আর আনুষ্ঠানিকতা—ছিল একে অপরকে বোঝার, পাশে দাঁড়ানোর, আর একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম রিংকু তাঁর উপস্থাপনায় তুলে ধরেন, কীভাবে স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাঁদের সংস্থা। তাঁর বক্তব্য যেন ছিল এক প্রতিচ্ছবি—সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের আলোয় আনার এক নীরব সংগ্রামের।
ব্র্যাক-এর প্রতিনিধি জানান, তাঁরা রায়পুরে চক্ষু সেবা নিয়ে কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতে পিপিকেএসবিএ-এর সঙ্গে যৌথভাবে স্বাস্থ্য ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটাও ছিল এক আশাবাদের বীজ বপন—সহযোগিতার মধ্য দিয়েই তৈরি হবে মানুষের পাশে থাকার নতুন অধ্যায়।
স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, “এসএমসি কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই। শিক্ষা শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সহানুভূতি শেখানোই সত্যিকারের পাঠ।” এই কথায় যেন প্রতিধ্বনিত হলো শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য—ভিন্নতা নয়, গ্রহণযোগ্যতা।
গণমাধ্যমকর্মী প্রদীপ কুমার রায় বলেন, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাফল্য ও সংগ্রামের গল্প তুলে ধরে দৈনিক জনকণ্ঠ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেনা আকবর ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাইফুল ইসলাম মুরাদ। তিনি প্রশংসা করেন সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদন এবং দায়িত্ববোধ থেকে উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সেই মুহূর্তটি যেন ছিল একটি বন্ধনের সূচনা—যেখানে এক ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এল সমাজের জন্য।
কর্মশালার অন্যতম স্পর্শকাতর মুহূর্ত ছিল উত্তর চর বংশী ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী যুবক সুমনের হাতে একটি হুইলচেয়ার তুলে দেওয়ার সময়। উপস্থিত সকলের চোখে-মুখে তখন একটাই ভাষা—ভালোবাসা।
শিক্ষক, ইমাম, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও এনজিও প্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। আর সেই অংশগ্রহণই প্রমাণ করে—পরিবর্তন আসতে পারে, যদি মানুষ চায়, যদি মানুষ পাশে দাঁড়ায়।
এই কর্মশালা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—এ যেন এক সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা। আয়োজকরা বিশ্বাস করেন, এটি প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকতর অন্তর্ভুক্তির পথে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
আমরা সবাই মিলে গড়তে পারি এমন একটি সমাজ—যেখানে বয়স বা সক্ষমতা নয়, মানুষ হিসেবেই থাকবে মূল পরিচয়।
শহীদ