
.
আড়িয়ল বিলে ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। পাকা ধান ঘরে তুলতে খোলা তৈরি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই কাজের জন্য ফসলের মাঠে বিশাল কৃষি কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি শত শত কৃষি শ্রমিক, রিপার মেশিন, বোঙ্গা ও আধুনিক হারভেস্টার নিয়ে আসা হয়েছে। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিল পাড়ের কৃষক পরিবারগুলো ধান কাটার প্রস্তুতিতে মেতে উঠবেন।
বির্স্তীণ আড়িয়ল বিল এলাকার গাদিঘাট, ষোলঘর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, শ্রীধরপুর, হাঁসাড়া, আলমপুর লস্করপুর, রাঢ়িখাল, নতুন বাজার, বাঘড়ার জাহানাবাদ এলাকায় ধান আর ধান।
চাষিরা বলেছেন, গত বারের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো। এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে আগাম ধান বিকিকিনি হচ্ছে। আড়িয়ল বিল পাড়ের কৃষকের ভিজা ধানের মণ কেনাবেচা হচ্ছে ১২০০ টাকা দরে। উপজেলাব্যাপী ২৮, ২৯ ও ৮৯ জাতের ধান চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শ্রীনগর উপজেলায় মোট ধান চাষ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম ধানের আবাদ করা হয়েছে। দেখা গেছে, বির্স্তীণ আড়িয়ল বিলের অধিকাংশ জমিতে পরিপক্ব ধান কাটার অপেক্ষা। এখন প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সোনালি ফসল এখন ঘরে তুলবার প্রতিযোগিতার পালা। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আওতাধীন চকের ধানে সবে মাত্র শীষ এসেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এসব চকের জমিগুলো নিচু হওয়ায় এই বিলম্ব। এর অন্যতম কারণ, এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খাল-জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া। এতে করে দিনদিন পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর কৃষি জমিতে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। আড়িয়ল বিল এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেন, আবুল হোসেন, আসরাফ আলী, আমিন শেখসহ ধান চাষিরা বলেন, ৪/৫ দিনের মধ্যে আগাম পাকা ধান কাটা শুরু করবেন। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিকানি জমিতে (১৪০ শতাংশ জমিতে) গড়ে ১০০ থেকে ১২০ মণ ধান পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। সমপরিমাণ জমিতে ধান চাষে ব্যয় খরচ ধরা হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। তবে কৃষকের নিজস্ব জমিতে খরচের পরিমাণ পড়ছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা।
আড়িয়ল বিলের অধিকাংশ জমিতে ২৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। তবে আড়িয়ল বিলের সংযুক্ত খাল হিসেবে পরিচিত শ্রীনগর-শ্যামসিদ্ধি খাল, গাদিঘাট-ভেন্নি খাল, শ্রীনগর-আলমপুর খাল, বাড়ৈখালী-মদনখালী খালগুলোর নব্যতা হারিয়েছে। এসব শাখা খালগুলো পদ্মানদী, ধলেশ্বরী নদী ও ইছামতি নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হলেও নানা কারণে শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় খালগুলোতে পানি থাকে না। এই অঞ্চলে কৃষি ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ খাল দখলমুক্ত ও পুনঃখননের দাবি এলাকাবাসীর।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, এবার ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। আড়িয়ল বিলে ৫ হাজার হেক্টর আগাম ধানের আবাদ হয়েছে। ২০ এপ্রিল থেকে পাকা ধান কাটা শুরু হবে। উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ধানে প্রদর্শনীর খেত রয়েছে ৩০টি। চলতি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৭০০ কৃষককে বিনামূল্যে ধান বীজ প্রদান করা হয়েছে।
প্যানেল