
আমতলী : হালখাতা পালনের জন্য লালখাতার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা
পুরানো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নতুন বছরে নতুন খাতায় নাম তোলাই হলো হালখাতা। ‘হালখাতা’ আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে হালখাতা শুরু হয়ে চলে মাসজুড়ে। গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য একটু ভাটা পড়লেও একেবারে গুটিয়ে যায়নি। ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের পুরানো হিসাবের খাতা বন্ধ ও নতুন বছরে নতুন খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন, আনন্দ উল্লাস, মিষ্টিমুখ ও আনুষ্ঠানিকতার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় এ বছর হালখাতা অনেকাংশে কম।
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০-১১ মার্চ সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতা’র প্রচলন হয় তৎকালীন ভারতবর্ষে। পুরানো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তা-ই ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত।
হালখাতা বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের বিনীতভাবে পাওনা শোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় শুভ হালখাতা কার্ড-এর মাধ্যমে। হালখাতার কার্ডের মাধ্যমে ওই বিশেষ দিনে দোকানে আসার নিমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই উপলক্ষে নববর্ষের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করান। ক্রেতা তাদের সামর্থানুসারে পুরানো দেনা শোধ করে দেন। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করা থেকে ‘হালখাতা’-র উদ্ভব। পহেলা বৈশাখের সকালে সনাতন ধর্মাবলম্বী দোকানি ও ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিদাতা গণেশ পূজার মাধ্যমে দিনের শুভ সূচনা করেন। দেবতার পায়ে ছোঁয়ানো সিন্দুরে স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত ও চন্দন চর্চিত খাতায় নতুন বছরের হিসাব-নিকাশ শুরু করা হয়।
আগে হালখাতায় অনেক আনন্দ হতো। দোকানে দোকানে প্লেটে করে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। ক্রেতারা পুরানো হিসাব পরিশোধ করতে আসতেন। ক্রেতাদের জন্য দোকানে চা, মিষ্টি, সন্দেশসহ নানা আয়োজন থাকত। মহাজনেরা দোকানে নতুন পণ্য দিত, সেই পণ্যে সিঁদুরের ফোঁটা দিত দোকানিরা। গদিতে উঠত নতুন পাটি। পয়লা বৈশাখে হালখাতা বাঙালি ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী অংশ হলেও বর্তমানে হালখাতা আর আগের মতো জমজমাট নেই। তবুও শহর-গ্রামের অনেক ব্যবসায়ী হালখাতার রেওয়াজ ধরে রেখেছেন। তবে শহরের চেয়ে গ্রামে হালখাতার প্রচলন এখনো বেশি রয়েছে।
বর্তমান আধুনিক যুগে আদিকালের হালখাতা অনেকটা উঠে গেছে। ‘হালখাতা’ শব্দটি শুনলেই চোখে ভাসে মোটা রঙের লালখাতা। দোকানিরা লাল খাতায় লিখে রাখেন পুরো বছরের বাকির হিসাব। বৈশাখের প্রথম দিন দোকানিকে বাকি পরিশোধ করতে গেলে তাদের আপ্যায়ন করাটাই হালখাতার ঐতিহ্য। বেশ কয়েক ধরনের লাল রঙের খাতায় হালখাতা চালু আছে বাজারে। এসব খাতার দামে ও নামে রয়েছে চমক। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে মানুষ আস্তে আস্তে হালখাতা ব্যবহার থেকে সরে আসছে। দিন যত যাচ্ছে হালখাতার ভবিষ্যৎ ততই অন্ধকার বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। হালখাতাকে ঘিরে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে বিশেষ হালখাতা কার্ড। যে কার্ড দিয়ে দোকানিরা ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানান হালখাতা উৎসবে। শনিবার আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন পুস্তক বিক্রেতার দোকানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুস্তকের দোকানে সারি সারি লালসালুর খাতা সাজিয়ে রেখেছে পুস্তক ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা ওই খাতা ক্রয় করে নিচ্ছেন। দোকানে বিভিন্ন বাহারি ধরনের হালখাতার কার্ড বিক্রি হচ্ছে। আমতলী পৌর শহরের মুদি মনোহারী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, খরিদদারদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য রবিবার ও সোমবার দুইদিনের হালখাতার আয়োজন করেছি। আমতলীর খেকুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপন বলেন, পহেলা বৈশাখে পুরানো বছরের হিসাব-নিকাশ শোধ করে দোকানিরা মিষ্টিমুখ করিয়ে ক্রেতাদের স্বাগত জানানোর আনন্দ অতুলনীয়। কিন্তু এখন তেমন আর আনন্দ হয় না। ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরির কর্মচারী রাকিবুল বাশার ও ভাই ভাই লাইব্রেরির কর্মচারী শাহীন বলেন, আগের মতো এখন আর ধুমধামে হালখাতার প্রচলন নেই। টালি খাতা ও হালখাতার চিঠি বিক্রি কিছুটা কম।
আমতলী উপজেলা পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাকিব আকন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হালখাতায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। প্রতিবছর বৈশাখের পূর্বে কয়েক হাজার লালখাতা বিক্রি হতো কিন্তু এখন অনেক কমে গেছে। আমতলী জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি পরিতোষ কর্মকার বলেন, হালখাতা শত শত বছরের পুরানো ঐতিহ্য। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সেতুবন্ধ হলো হালখাতা। কিন্তু বেচাকেনা কম বিধায় ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা। তাই হালখাতাও কম হচ্ছে।
আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণপালা ‘ঢাকী’
রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম ॥ আধুনিক প্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি। গ্রামীণ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম যাত্রাপালা, পুতুল নাচ ও সার্কাস আজ অস্তিত্ব সংকটে। বিশেষত যাত্রাপালার একটি বিশেষ ধারা ‘ঢাকী’ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় চৈত্রসংক্রান্তিতে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রাতভর ঢাকী পালা মঞ্চস্থ হতো। রাবণ বধ, রাজা হরিশ্চন্দ্র, কংস বধ, শিব-পার্বতীসহ নানা পৌরাণিক কাহিনী মঞ্চে তুলে ধরতেন ঢাকী শিল্পীরা। বিনিময়ে গৃহস্থরা চাল, ডাল, নারকেল, সুপারি ও অর্থ দিয়ে শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করতেন। তবে কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত প্রায়। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেলাও। চৈত্র সংক্রান্তিতে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের গোপীনাথপুর গ্রামে মেলা বসে। মেলার মঞ্চে রাবণবধ, রাজা হরিশ্চন্দ্র ও কংসবধ মঞ্চস্থ করা হয়। যাত্রাপালা ঢাকীর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা তুষার কান্তি দাশ, উজ্জ্বল সরকার, সুজন রায় ও সুকান্ত সরকার জানান, সময়ের পরিবর্তনে এখন আর গ্রামীণ পালা ঢাকীর কদর নেই। এ ছাড়াও চৈত্রসংক্রান্তিতে আগে মেলায় যে পরিমাণ মানুষের সমাগম হতো কালের আবর্তে তাও হারিয়ে গেছে। এখন আর সেই উচ্ছ্বাস নেই। প্রাণ নেই গ্রামীণ মেলারও। জোরারগঞ্জের তেতৈয়া তরুণ সংঘ ও যুব সমাজের উদ্যোগে গ্রামীণ পালা রাবণ বধ পরিচালনাকারী সঞ্জয় কুমার নাথ, মিহির কান্তি নাথ ও বিকাশ চন্দ্র নাথ জানান, গ্রামীণ পালা রাবণ বধ মঞ্চস্থ করতে গিয়ে বেশ সাড়া পেলেও রাতে ঢাক- ঢোলের শব্দে অনেকে বিরক্ত হয়। এ ছাড়াও এসবের প্রচলন না থাকায় পোশাক ও কস্টিউম পাওয়া যায় না। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাষ সরকার বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকীর (যাত্রাপালা) এখন ঘোর দুর্দিন। আগের মতো আর দেখা যায় না পথে-প্রান্তরে। আগে চৈত্র মাসে বাড়িতে-বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পালা ঢাকী দেখা যেত। কালের পরিবর্তনে এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব লোকসংস্কৃতি।
এ ব্যাপারে নাট্যকার মঈন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী সেলিম বলেন, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসন এবং বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টির যথাযথ চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও পহেলা বৈশাখে গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চা, বিকাশে সংস্কৃতিমনা মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। এতে করে ঢাকী, গ্রামীণ মেলা, যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন লোক সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব হবে।
রাজবাড়ীতে এক ইলিশ
৮৩০০ টাকায় বিক্রি
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী ॥ রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে উঠেছে প্রায় ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ। শনিবার সকালে দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা মাছ বাজারে নিয়ে আসেন স্থানীয় জেলে হালিম সরদার। মাছটির ওজন ১ কেজি ৮০০ গ্রাম, আর নিলামে সেটি বিক্রি হয় ৮ হাজার ৩ শত টাকায়।
দৌলতদিয়া মাছ বাজারের আড়তে নিলামে উঠলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শাজাহান ক্রয় করেন। তিনি জানান, ‘পদ্মার ইলিশের কদর সব সময়ই বেশি। তবে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এবার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। তাই দামও স্বাভাবিকভাবেই বেশি।’ মাছ ব্যবসায়ী শাজাহান আরও বলেন, ‘মাছটি অনলাইনে বিক্রি করব। এতে আমি কিছুটা লাভ করতেও পারব।’
পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে এখন ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে। ফলে বড় আকৃতির ইলিশের দাম ছুঁয়েছে রেকর্ড উচ্চতায়।
থেমে নেই গরমে প্রাণের
সখার কারিগররা
নিজস্ব সংবাদদাতা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট ॥ ‘প্রাণের সখা, তালের পাখা, শীত কালেতে দেওনা দেখা, গরম কালেতে প্রাণের সখা।’ ৩০ বছর ধরে মেলার মাঠে পাখা বিক্রি করে চলে যাদের জীবন। তবুও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই এ কারিগরেরা। এরকম মোরেলগঞ্জে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী গোপাল চাঁদ সাধু ঠাকুরের ধামে বারুণী স্নানোৎসবে মেলায় পাখা বিক্রির জন্য দোকান নিয়ে আসা ৮-১০টি দোকানি বিভিন্ন রং-বেরঙের তালের পাখার পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছেন ক্রেতাদের অপেক্ষায়। কাঠি দেওয়া প্রতিটি তালের পাখা ৫০ টাকা। কাঠি ছাড়া সাধারণ পাখা ৩০ টাকা। দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় কাটতি হবে বেশি এ ভরসায় দোকানিরা।
কথা হয় মেলার মাঠে বিক্রির জন্য তালের পাখা নিয়ে আসা মংলা উপজেলার খাসেরডাঙ্গা গ্রামের সুশান্ত মিস্ত্রী ও তার স্ত্রী দাসী রানী মিস্ত্রীর সঙ্গে। ৩০ বছর ধরে এ গোপাল চাঁদ মেলায় আসেন ৭শ থেকে ৮শ পাখা নিয়ে। এ বছরও ৮শ পাখা নিয়ে এসেছেন। বিক্রি করে বাড়িতে ফিরবেন। একই এলাকার বিলাশ চন্দ্র চক্রবর্তী তিনিও এ মেলায় ২৫ বছর ধরে পাখা নিয়ে আসেন। মধুসুধন মিস্ত্রী তিনিও ৩ বছর ধরে মেলার মাঠে আসেন। এরকম লক্ষ্মীখালী গ্রামের সুরেন মন্ডল, সুজিত মজুমদার পাখার পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন। প্রতিটি দোকানদারেরই একই কথা প্রতিবছরই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের দিতে পারে না। এবারে চাহিদা কম মেলার প্রথম দিনে সামান্য বিক্রি হয়েছে। দামের ক্ষেত্রেও গতবছরের দামেই এবারও বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু গোপাল চাঁদ মেলার মাঠেই নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মেলার মাঠে পাখা বিক্রি করে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। এ কুটির শিল্পকে ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সহযোগিতার দাবি জানান পাখা তৈরির কারিগররা।
মাগুরায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে
চড়ক পূজা
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা ॥ মাগুরায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে চড়ক পূজা হচ্ছে। বাটিকাডাঙ্গা, আড়াইশত, লক্ষ্মীপুর, আলীধানী, শিবরামপুর, বাখেরা, রামনগর, ধনপাড়া নিজনান্দুয়ালী প্রভৃতি স্থানে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় পূজা। নানা রূপে সেজে অনেকে শহরে আসেন। ১ বৈশাখ নতুন বছরের ১৪৩২ সালের প্রথম দিনে দোকানে দোকানে অনুষ্ঠিত হবে হালখাতা। মাগুরায় ১ বৈশাখ শুভ নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। পালপাড়ায় শিল্পীরা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের খেলনা বৈশাখী মেলায় বিক্রির জন্য। বিভিন্ন দোকানে বৈশাখী কাপড় বিক্রি হচ্ছে। তালের হাতপাখা তৈরি হচ্ছে। অনুষ্ঠিত হবে হালখাতা।
ঝালকাঠিতে ঘোড়দৌড়
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝালকাঠি ॥ বাংলা নববর্ষের চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার লক্ষ্যে চিরায়ত বাংলার লোকজ ঐতিহ্য ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাঠালিয়া উপজেলার কচুয়ায় স্থানীয় যুব সমাজ খন্দকার বাড়ির মাঠে এ ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করেন। প্রতিযোগিতায় ১৫টি ঘোড়া অংশ নেয়। ঘোড়দৌড় দেখতে কাঁঠালিয়া, রাজাপুর, বেতাগী ও বরগুনাসহ বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা অংশগ্রহণ করে। মাঠের চারপাশে স্থানীয়রা মেলার আয়োজন করেন। এতে দোগনার এনায়েত হোসেনের ঘোড়া প্রথম হয়। পর্যায়ক্রমে আওরাবুনিয়ার মহসিনের ঘোড়া দ্বিতীয় ও দোগনার মিরাজ সিকদারের ঘোড়া তৃতীয় স্থান লাভ করে। পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন তরুণ সমাজসেবক ও রুবেল যুব ও ক্রীড়া সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আতিকুর রহমান রুবেল।
লাকসামে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা উদ্বোধন
নিজস্ব সংবাদদাতা, লাকসাম, কুমিল্লা ॥ লাকসামে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী ও লোকজ মেলা উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার লাকসাম উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে এ মেলা উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ। এ সময়ে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সুধী সমাজ উপস্থিত ছিলেন। মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের স্টল, হরেক রকম দোকানের পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড। হাতে তৈরি পোশাক, গহনা ও মুখরোচক খাবার, শিশু-কিশোররা হৈ-হুল্লোড় করে খেলছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গহনা, ব্যাগ, ক্যাপ, খেলনা, খাবার হোটেল, ফুচকা-চটপটির দোকান, হারবাল দোকান, তৈজসপত্রসহ হরেক রকম আয়োজন দেখতে পাওয়া গেছে। মেলাকে ঘিরে নাগরিকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ॥ নববর্ষ পালন করা হলো না স্কুলছাত্রীর
সংবাদদাতা, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ ॥ তাড়াশে বিদ্যুতায়িত হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পহেলা বৈশাখে পাড়ার ছেলে-মেয়েরা একত্রিত হয়ে করবে বাংলা বর্ষবরণ। পাশাপাশি চলবে নিজেদের রান্না করা নানা পদের খাবার আয়োজন। সাউন্ড বক্সে বাজবে গান। হবে আনন্দ উৎসব। তারই আয়োজন হবার কথা ছিল কেয়া রায়দের বাড়িতে। এজন্য পহেলা বৈশাখ বাড়িতে আসবে বন্ধু-বান্ধবী। তাই খেজুরগাছের ডাল কেটে তা দিয়ে রান্না ঘরটা পরিষ্কার করছিল কেয়া। এ সময় রান্নাঘরের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে প্রাণ হারায় কেয়া রায় (১২)।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তাড়াশ পৌর এলাকার সোলাপাড়া মহল্লার পশ্চিম তাল পাড়ার রাম রায়ের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। কেয়া রায় ওই মহল্লার শ্রীরাম চন্দ্র রায়ের মেয়ে ও সোলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কণ্ঠবীথির বছরপূর্তি উপলক্ষে শিশুদের কবিতা আবৃত্তি
উৎসব
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজনে মাগুরার প্রথম আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবীথির ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার দিনব্যাপী শিশু কবিতা আবৃত্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সারাদেশের শতাধিক আবৃত্তিশিল্পী অংশগ্রহণ করেন। বেলা ১১টায় মাগুরা অডিটরিয়ামে উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুল হক। আবৃত্তি শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। উৎসব উপলক্ষে শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। আবৃত্তি উৎসবে মাগুরা, যশোর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, খুলনা থেকে বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনের দুই শতাধিক আবৃত্তি শিল্পী অংশ নেন। এ ছাড়া আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাগুরার আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবীথির সদস্যরা।
আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহবুবুল হক। বক্তব্য রাখেন জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস, কণ্ঠবীথির আহ্বায়ক খান মাহজারুল হক লিপু প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মানিত করা হয়।