ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

পেশা বদলের ভাবনায় জেলেরা, জাটকা সংরক্ষণে থমকে রাজবাড়ীর জেলে জীবন

শফিকুল ইসলাম শামীম, নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪২, ১২ এপ্রিল ২০২৫

পেশা বদলের ভাবনায় জেলেরা, জাটকা সংরক্ষণে থমকে রাজবাড়ীর জেলে জীবন

পদ্মার তীরে গড়ে ওঠা রাজবাড়ী জেলার জেলেদের জীবনযাত্রা যেন এখন থমকে গেছে। চলমান জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কারণে নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, আর সে কারণে জেলেদের বেশির ভাগই অলস সময় পার করছেন। অনেকে সময় কাঁটাচ্ছেন জাল সেলাই করে, কেউবা সাময়িক অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

জেলার মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলায় বর্তমানে ১৪ হাজার ২ শত নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সবাই সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই পরিবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য অন্য পেশায় যাচ্ছেন। অনেকে স্থায়ী ভাবে যাচ্ছেন। 

মো. অছেল বেপারী নামের এক জেলে বলেন, “নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। দিন দিন জীবিকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। জাটকা ধরতে না পারায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবছি কোনো স্থায়ী পেশায় চলে যাব।”
একাধিক জেলে বলেন, জাটকা সংরক্ষন চলমান রয়েছে। যে কারণে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছি না। সংসার চালানোর প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে সাময়িক সময়ের জন্য অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে। তবে তারা বলেন, আমরা নিবন্ধনকৃত জেলেরা নদীতে যাচ্ছি না। কিন্ত মৌসুমী জেলেরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। 

জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ দেশের নদীগুলোর সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এর প্রভাব জেলেদের জীবনে তাৎক্ষণিক ভাবে নেতিবাচক পড়ে। অনেক জেলে বলছেন, যদি এ সময়টিতে পর্যাপ্ত সহায়তা, খাদ্য বা বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যবস্থা থাকত, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সহনীয় হতো।

জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ জেলেদের জন্য যেমন একটি চ্যালেঞ্জ, তেমনি এটি দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই উদ্যোগ সফল করতে হলে জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা ও সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতেই হবে। নইলে ভবিষ্যতে পদ্মার পাড়ে আর হয়তো শোনা যাবে না জাল বোনা মানুষের গল্প।

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জানান, “জাটকা সংরক্ষণ দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই এই সপ্তাহে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে আমরা চেষ্টা করছি জেলেদের পাশে দাঁড়াতে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সবাইকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

 

মুমু

×