
বাউফলের মৃৎশিল্পীদের তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। এই সুবাদে শহরের কাগুজী পুল পালপাড়া, কনকদিয়া ও বগা বন্দরের দোয়ানী ও পাঁচআনী এলাকায় গড়ে উঠেছে মৃৎশিল্পের বিশাল সাম্রাজ্য।
স্থানীয়ভাবে এদের ‘পাল’ বলা হয়। তারা কাদামাটির এই প্রাচীন শিল্পকে এখনো ধরে রেখেছেন এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সহস্রাধিক পরিবার যুক্ত আছেন এই শিল্পের সঙ্গে। নারী-পুরুষ সবাই মিলে একত্রে কাজ করছেন—কেউ কাদা ঘুটছেন, কেউ চাকতি ঘুরাচ্ছেন, আবার কেউ তৈরি করছেন নানান ধরনের মাটির পণ্য।
এসব পণ্য রং করার পর প্যাকেটজাত করে সরবরাহ করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরগরম থাকে এসব এলাকা। মৌসুমভেদে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয় ঢাকার আড়ং, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটস, হিট হ্যান্ডি ক্রাফটস এবং কারিতাসের প্রকল্প ‘কোর-দ্য জুটওয়ার্ক’-এ।
এসব প্রতিষ্ঠান এখান থেকে মগ, প্লেট, তরকারির বাটি, মিষ্টির বাটি, জগ, ফলপ্লেট, পা-ঘষনি, ফুলদানী, চায়ের কাপ-প্রিচ, ডিনার সেট, মোমদানী, অ্যাশট্রে, কয়েলদানী ও বিভিন্ন ধরণের পুতুলসহ দৃষ্টিনন্দন বহু মাটির পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে।
এসব পণ্য তাদের মাধ্যমেই রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই পোড়া মাটিতে তৈরি এসব পণ্যে রং করা হয়। বিশেষ করে হালকা কমলা রঙের মধ্যে মনকাড়া কালো রঙের যে নকশা থাকে, তা একটি গাছের কষ দিয়ে তৈরি করা হয়।
কাগুজী পুল পালপাড়ার বরুণ পালের দুই মেয়ে শতাব্দী পাল ও তন্দ্রা পালের দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের বিভিন্ন পণ্যের দেশের বাইরেও কদর রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোতেও মৃৎশিল্পীদের তৈরি কলস, বাসন, হাঁড়ি, মটকা ও চারি বিক্রি হয়।
বিশেষ করে এখানকার তৈরি জালের চাক্কি সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। স্বল্প মূলধনে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী ও বিধবা কর্মজীবী মানুষ কাজ করে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন।
বাউফলের কাগুজী পুল পালপাড়ার একজন মৃৎশিল্প মালিক বরুণ পাল জানান, তাদের তৈরি পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকায় কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন সম্ভব হচ্ছে না। মাটির তৈরি সামগ্রীগুলো হাতে রং করতে হয়। তাদের স্প্রে মেশিন নেই, নেই বৈদ্যুতিক চুল্লিও। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত কিংবা বেসরকারি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হলে এ শিল্পের পরিধি আরও সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে।”
আফরোজা